মানসিক সুস্থতা রক্ষায় সচেতনতা জরুরি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:০৬ পিএম
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং ভয়াবহ নেতিবাচক বিষয় আত্মহত্যা। মনোচিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। মানসিক অসুস্থতা ব্যক্তি (হতাশা, উদ্ভিগ্ন, হীনমন্যতা, নিজেকে ব্যর্থ ভাবা) ইত্যাদি যখন চরমভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তখনই ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে। আমাদের আশপাশেই অনেক মানসিক অসুস্থতা সম্পূর্ণ ব্যক্তি আছে যারা কোনো স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করতে পারে না। সব সময় নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় চরম হতাশায় জীবনকে নিরানন্দ করে তোলে। জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়। কোনো না কোনো মানসিক অসুস্থতা চরম আকার ধারণ করলেই মানুষ আত্মহত্যার আশ্রয় নেয়।
গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যার পেছনে মানুষের মানসিক কোনো না কোনো অসুস্থতা থাকে এবং তা প্রকাশও পায় নানা কাজ এবং কথাবার্তার মাধ্যমে যা আশপাশের কাছের মানুষজন বুঝতে পারেন। পরিকল্পিতভাবে বা আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভাবে অকালে হাজারো প্রাণ ঝরে যায়। একমাত্র মৃত্যুই সব কিছুর স্থায়ী সমাধান ভেবে আত্মহত্যার পেছনে ছোটে। শারীরিকভাবে অসুস্থতার লক্ষণগুলো যতটা প্রকাশ করা হয় মানসিক অসুস্থতা (মন খারাপ, ভালোলাগে না, হতাশা, আবেগ)গুলো ততটাই লুকায়িত রাখা হয়। অন্যরা কি ভাববে তা ভেবে কারো কাছে শেয়ারও করা হয় না। অনেক সময় মানসিক চাপের দরুন চরম শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়। মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বে যে যে কারণে মানুষের মৃত্যু হয়, তার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আত্মহত্যা। ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার হার সবচেয়ে বেশি। আত্মহননের সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক সময়ই থাকে অতি তুচ্ছ কারণ। কখনো শুধু মা-বাবার বকুনি খেয়ে, শিক্ষকের বকুনি, স্কুলের ফলাফল অসন্তুষ্ট হয়ে, কোনো পছন্দের মানুষকে না পেলে, পছন্দের পোশাক, খাবার না পেলে, প্রেমে ব্যর্থ হলে, মোবাইল বা কোনো ডিভাইস না পাওয়ার অভিমানে হারিয়ে যায় সব রকমের ভালোবাসার বন্ধন থেকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনে ১ জন মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এখন আসা যাক মানসিক সমস্যা বলতে কি বোঝায় যা অনেকেই জানে না। জানলেও তা প্রকাশ করেন না। যদি কারো চিন্তার পরিবর্তন, আবেগের পরিবর্তন, স্মৃতিশক্তির পরিবর্তন, বিচার বিবেচনা পরিবর্তন, যা ব্যক্তির নিজের এবং অন্য মানুষের ক্ষতির কারণ। যদি লক্ষণগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ বা মাস থাকে তবেই বুঝতে হবে তার কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা আছে। দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। আমরা অনেকেই মানসিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারি না কোন আচরণগুলো মানসিক অসুস্থতা তৈরি করে। মানসিক এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন চেপে রাখার ফলে গুরুতর মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা নিরলসভাবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
মানসিক সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা করা না হয় তবে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুস্থ মানসিক বিকাশের অভাবে মানুষ অনবরত ধ্বংসের দিকে নিজেদের ধাবিত করছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের প্রধান বাধা হলো সামাজিক সচেতনতার অভাব এবং কিছু দেশে আত্মঘাতী আচরণের অবৈধতার জন্য অনেক সময় আত্মহত্যার বিষয়টি সাধারণ মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের নিজেদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে। নিজের জীবনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলোর সঙ্গে মোকাবেলা করার মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।