×

মুক্তচিন্তা

শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুক্রবার শুরু হয়েছে। আজ মহা অষ্ঠমী। জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন ঘটছে ঘোড়ায় চড়ে। ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। সব সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রতি দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা। প্রতি বছরের মতো এবারো দুর্গোৎসবকে ঘিরে দেশব্যাপী দেখা গেছে আনন্দ-উৎসবের ফল্গুধারা। সত্য ও শুভর জয়- এই হচ্ছে সব ধর্মের মর্মকথা। হিন্দু শাস্ত্রানুসারে দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। কিন্তু পৌরাণিক মতে, দেবী দুর্গা প্রতি বছর কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি মর্ত্যলোকে আগমনের সময়ে চারটি আলাদা বাহন (অশ্ব, হস্তী, নৌকা এবং দোলা) ব্যবহার করে থাকেন। স্বামীর বাড়ি ফিরেও যান আলাদা আলাদা বাহনে। এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন ঘোটক তথা ঘোড়ায় চড়ে। পুরাণ মতে, ঘোড়ায় আগমন অবশ্য শুভ নহে। চারদিকে সবকিছু ওলট-পালট হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে এই আগমন। দেবী দুর্গা বিদায়ও নিবেন ঘোটকে। দেবী দুর্গার ঘোটকে আগমন ও বিদায় হিসেবে পুরাণ ইঙ্গিত দেয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, সামাজিক অশান্তির। অবশ্য সাম্প্রতিককালে এই বিষয়াদি সারা বিশ্বেরই নিত্যচিত্রের রূপ ধারণ করেছে। অশুভ অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুভ দেবশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ের দিন হিসেবেই দুর্গাপূজার দশমীর দিনটিকে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’। অসুরকুলের দম্ভ-দৌরাত্ম্য থেকে দেবকুলকে রক্ষায় মাতৃরূপী ও শক্তিরূপী দেবী দুর্গার আগমন। অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেন। অন্যায় ও অশুভকে পরাস্ত করার মাধ্যমে ন্যায় ও শুভবোধের প্রতিষ্ঠা ঘটে। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দূর করে দেন যত গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন। ফলে সত্য শুভ ও কল্যাণের এক গভীর প্রতীকী ব্যঞ্জনা নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে ওঠে সার্বজনীন। বর্তমানে এ দেশে দুর্গোৎসব কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসব উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের মিডিয়াগুলোও এটিকে সার্বজনীন উৎসব গণ্য করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সাজায়। এটি অনুপম সম্প্রীতি চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই সম্প্রীতিও মাঝে মাঝেই অসুরের অবাঞ্ছিত কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর শুভবোধসম্পন্ন সব মানুষকেই লজ্জিত, আহত এবং শঙ্কিত করে। তারই প্রেক্ষাপটে সরকার পূজা উপলক্ষে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এর মাঝেও দেশের কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা-মণ্ডপ ভাঙচুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এগুলো দুঃখজনক। সবাই মিলে এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে বন্ধন আরো দৃঢ় হোক। আমাদের মনের সব হিংসা, দ্বেষ, কালিমা দূর হয়ে যাক। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে আমরা সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব- এই হোক প্রার্থনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App