×

জাতীয়

শিক্ষকদের কষ্টের ‘অষ্টপ্রহর’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৫৬ এএম

শিক্ষকদের কষ্টের ‘অষ্টপ্রহর’
আমলাদের লালফিতার দৌরাত্ম্যে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের এক বছর ধরে পদোন্নতি নেই। নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারি আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা। বেতন না বাড়ানোর কারণে হতাশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কারিগরিতে একই শিক্ষক দুই শিফটে ক্লাস নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় বেতন না পেয়ে হতাশ মাদ্রাসা শিক্ষকরা। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ দিলেও জটিলতা কাটেনি। সবমিলিয়ে কষ্টের ‘অষ্টপ্রহর’ পার করছেন শিক্ষকরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) সারাদেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হবে। দিনটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হলেও ইউনিসেফ ৫ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের’ মর্যাদা দেয়ার পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের একশটি দেশে আজ ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হবে। তবে সরকারিভাবে এই দিবস উদযাপন হচ্ছে না। শিক্ষকদের বেশ কটি সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করবে। ‘তরুণ শিক্ষকরাই পেশার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করবে অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটি। ব্যানবেইস মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। এ ছাড়া শিক্ষক দিবসের অন্য দুটি অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ২০১০ সালে শেখ হাসিনা সরকার দেড় হাজারেরও কিছু বেশি নতুন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। এরপর গত ৯ বছরে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। তবে গত ছয় মাস ধরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজই করে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গত এক মাস ধরে বলছেন, যে কোনো সময় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু সেটি এখনো প্রকাশ হয়নি। ফলে এমপিওবিহীন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মারাত্মক কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। সরকারি কারিগরি শিক্ষকরা দিনে দুই শিফটে পাঠদান করলেও আর্থিক কোনো সুবিধা তারা পান না। এ কারণে বহু জায়গায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শিফট বন্ধ হয়ে গেছে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা বিশেষ করে এবতেদায়ী শিক্ষকরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন তাদের বেতন বাড়াতে, কিন্তু সেটিও এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ভোরের কাগজ বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার সমস্যা হলো দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে পশ্চাদপদতা ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে অক্ষমতা। দেশে ভালো শিক্ষানীতি, রাজনৈতিক নির্দেশনা সত্তে¡ও আশানুরূপ সাফল্য অর্জন থেকে পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার উন্নয়ন বলতে দালানকোঠা নির্মাণেই অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু শিক্ষার্থীর উন্নয়নে শিক্ষা, শিক্ষক যেখানে অপরিহার্য অনুষঙ্গ সেখানে শিক্ষককে বাদ দিয়ে উন্নয়নের ভাবনা করা হয়। এর ফলেই শিক্ষকদের কষ্ট বেশি। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শিক্ষায় বৈষম্য অনেকটা কমে এসেছে। যেটুকু বৈষম্য রয়েছে সেটুকু নিরসনে বাজেটে টাকা বাড়িয়ে সমস্যার সমাধানে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক সংগঠনগুলো শিক্ষক দিবস উদযাপন করলেও শিক্ষকরা নানা কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন-বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ দাবি বাস্তবায়নে চলতি মাসের ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করবেন শিক্ষকরা। পরে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। এক বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি দিতে পারছে না। এমনকি তারা আর্থিক প্রণোদনাও পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস শিক্ষা সমিতির সদস্য সচিব অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, ঠিক সময়ে পদোন্নতি পাওয়া, বিভিন্নক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা পাওয়াসহ সম্মান ও মর্যাদা প্রাপ্তির দিক দিয়ে শিক্ষকরা পিছিয়ে আছেন। তবুও শিক্ষকরা শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই শিক্ষক দিবসে তাদের একটাই চাওয়া- ঠিক সময়ে যেন পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App