×

জাতীয়

ভেঙে পড়ছে ওমর ফারুকের সাম্রাজ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১৩ এএম

ভেঙে পড়ছে ওমর ফারুকের সাম্রাজ্য
ভেঙে পড়ছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাম্রাজ্য। টানা ৮ বছর সংগঠনটির প্রধানের দায়িত্বে থাকাকালে একক আধিপত্য বিস্তার করে গড়ে তোলেন সাম্রাজ্য। এ সময় নিয়ন্ত্রণ নেন যুবলীগের প্রতিটি ইউনিটের। টেন্ডার থেকে চাঁদার ভাগিদার, ক্যাসিনো-জুয়া কারবারিদের প্রশ্রয়দাতা ও অংশীদার, কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঠাঁই দেয়াসহ দল ও সরকারের কাউকে তোয়াক্কা না করার অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। গত ৮ বছরে গড়ে তুলেছেন টাকার বিশাল পাহাড়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ফলে অনেকটাই চাপে পড়েছেন তিনি। তলব করা হয়েছে তার ব্যাংক হিসাবও। জানা গেছে, ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী চলমান অভিযানে যুবলীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা আটক হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমসহ কয়েকজন। এ ছাড়া যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ডিএসসিসির ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক সাঈদসহ আরো কয়েকজন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে আছেন। আটককৃতদের বাসা ও অফিস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র ও মদ। আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে তাদের এসব অপকর্মের অংশীদার, সুবিধাভোগী ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে যুবলীগ চেয়ারম্যানসহ সংগঠনটির কয়েকজন নেতার নাম বলেছেন। ওমর ফারুকের হাত ধরে অনেক অনুপ্রবেশকারী যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। পদ দিতে গিয়ে বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে। এ ছাড়া যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরী বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন। সংগঠনের যে কোনো ক্ষেত্রে ওমর ফারুকের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সাধারণ সম্পাদককে কখনোই পাত্তা দিতেন না তিনি। কমিটি বাণিজ্য থেকে শুরু করে যুবলীগের এমন কোনো পর্যায়ের নেতা বাদ নেই, তাদের অপকর্মের শেল্টার তিনি দিতেন না। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে কোনো এমপি-মন্ত্রীকেও পাত্তা দিতেন না তিনি। যুবলীগ চেয়ারম্যানের সব অর্থনৈতিক লেনদেন ও কমিটি বাণিজ্যের বিষয় দেখভাল করতেন সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস। এক সময় দলীয় অফিসে পিয়ন হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তারও আগে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করতেন আনিস। যুবলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সারাদেশের তৃণমূলের নেতারা ঢাকায় এসে চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ করতে হলে আগে আনিসের সঙ্গে কথা বলতে হতো। এমনকি আনিসের মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা ও পৌরতে আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দিতেন ফারুক। সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর আনিসের নাম চলে আসে বেশ জোরেসোরে। এক পর্যায়ে অনেকটা আড়ালেই চলে যান আনিস। তবে কেউ কেউ বলছেন; বর্তমান অপকর্ম ঢাকতেই স্বেচ্চায় গোপনে চলে গেছে আনিস। কারো কারো মতে, বিস্তারিত তথ্যের জন্যই আনিসকে আটক করে গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে জ্ঞিাসাবাদ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যানের সব কর্মকাণ্ডের সাক্ষী তিনি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাসিনো, জুয়া ও বড় বড় টেন্ডারের ভাগ পেতেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যেসব অপকর্মের সঙ্গেই যুক্ত থাকুক না কেন, তার ভাগ চেয়ারম্যানকে দিতে হতো। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় যেসব অবৈধ ক্যাসিনো চলত, তা স¤্রাট, সাঈদ ও খালিদ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখান থেকে প্রতি রাতে আয় হতো কোটি কোটি টাকা। এসব টাকারও ভাগ পেতেন তিনি। অভিযোগ আছে, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগরী ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটিতে অনেক অনুপ্রবেশকারীকে ঠাঁই দিয়েছেন ওমর ফারুক। আর উপেক্ষিত হয়েছেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের একাধিক নেতার অভিযোগ- ওমর ফারুক চৌধুরী কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। টাকা ছাড়া দেশের কোথাও তিনি কমিটিতে পদ দিতেন না। জেলা কমিটিকে মাইনাস করে কেন্দ্র থেকেই উপজেলা ও পৌরসভাতে আহবায়ক কমিটি দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পদ নিয়েই এসব নেতা মাদক, টেন্ডারসহ যাবতীয় অপকর্মের সঙ্গে নিজেকে জড়ান। এতে করে ত্যাগীরা যেমন বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি সংগঠনে ‘কাউয়া-হাইব্রিডের’ সংখ্যাও বেড়েছে। এ পর্যন্ত যারা পড়েছেন তারা সবাই যুবলীগ চেয়ারম্যানকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতেন। প্রধানমন্ত্রী এসব বুঝতে পেরে হার্ডলাইনে গেছেন। অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছেন তিনি। অনেক প্রভাবশালী নেতা ধরা পড়েছেন। অনেকেই নজরদারিতে আছেন। তা ছাড়া যুবলীগ চেয়ারম্যানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করায় এখন তিনি অনেকটাই চাপে আছেন। স¤্রাট, খালেদ, জি কে শামীমসহ অনেক নেতা বেকায়দায় থাকায় অনেকটা সাম্রাজ্য হারাতে বসেছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া ওমর ফারুক সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার সময় জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর হাত ধরে তিনি জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরশাদের পতনের পর কিছুদিন নীরব ছিলেন ওমর ফারুক। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৯৭ সালে হন কোষাধ্যক্ষ। ২০০৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। চেয়ারম্যান হন ২০১২ সালে। এরপর থেকে যুবলীগে তার সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়ার পর বদলে যান ওমর ফারক। যদিও তার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই। কিন্তু টাকার পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার নামে থাকা সব হিসাবের লেনদেন তথ্য, বিবরণীসহ পাঠাতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট। এতে বলা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরীর নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন, বিবরণীর তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App