×

জাতীয়

‘কাজ হচ্ছে’ বললেও উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ১১:২৮ এএম

‘কাজ হচ্ছে’ বললেও উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়

ফাইল ছবি

দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন মহল থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং এর আওতায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি ওঠে। এ বিষয়ে ‘কাজ হচ্ছে’- সরকার পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের অভিযোগ, সরকার বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। মূল বিষয়ে কথা না বলে মন্ত্রী বক্তব্য রাখেন ভিন্ন প্রসঙ্গে। যা আয়োজক ও সংখ্যালঘুদের হতাশ করেছে। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে ইশতেহারে প্রাধান্য দিলেও সরকার এখন সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে সংবিধানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কোনো বিধান নেই। ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কোনো ভিন্ন অনুচ্ছেদের প্রয়োজন ছিল না। কারণ সেটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। এখন যে সংবিধান, তাতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্রধর্ম। ফলে সংবিধান সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় যথাযথ কাজ করতে পারছে না। ভারতের সংবিধানে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও এ রকম বিশেষ বিধান থাকা উচিত। জানা যায়, ২০১৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের প্রথম মহাসমাবেশ থেকে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি উত্থাপন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ঐক্যপরিষদের দ্বিতীয় মহাসমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রথম মহাসমাবেশ থেকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে যে দাবিগুলো উঠেছিল, সেখানেও সেই দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে অঙ্গীকার করার আহবান জানানো হয় সমাবেশ থেকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ওই সময় যেসব দাবি উত্থাপন করেছিলাম তার মধ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা ছাড়া বাদবাকি সব দাবিই আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার হিসেবে এসেছে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে যে অঙ্গীকার করেছেন তার বাস্তবায়ন তিনি করবেন। কাল বিলম্ব না করে সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। ইতোমধ্যে দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি এবং গণতান্ত্রিক নানা পন্থায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আইন প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, পাঁচ বছরেও সরকার এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। আমরা দায়িত্ব নিয়ে সংখ্যালঘু কমিশনের বিষয়ে একটি খসড়া বিল তৈরি করেছি। এখনো তা সরকারকে দেয়া হয়নি। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের রূপরেখা কেমন হতে পারে এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে আমরা একটা খসড়া তৈরি করব। আইন মন্ত্রণালয় ও আইন কমিশনে তা জমা দেবো। সরকার চাইলে সেখান থেকে সহায়তা নিতে পারে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতে সংখ্যালঘু আইন রয়েছে। তার অধীনে একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনও রয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। অনেক দেশেই এ রকম কমিশন রয়েছে। তবে এমন আইন ও কমিশন করতে হবে, যা সঠিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে আমরা চাইব সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন এবং দ্রæত তা প্রণয়ন করবেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ধর্মীয় সহিংসতা সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেও তারা যথেষ্ট সুরক্ষা পাচ্ছেন না। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা উচিত। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। আশা করছি শিগগিরই এই আইন প্রণয়নে আমরা সফল হবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App