বকুলতলায় শরৎবন্দনা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০১:৪৮ পিএম
বর্ষার বিদায় হয়েছে বেশ আগেই। বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠেছে শরতেরও। কদিন পরেই আসবে হিমছোঁয়া হেমন্ত। তবে এ যেন ক্যালেন্ডারের ভাষা। শরতের শারদীয় সাদা মেঘের আকাশ কালো করে কখনও হামলে পড়ছে যেন আষাঢ়ের মেঘ। খেয়ালি প্রকৃতি শরতকে বদলে দিয়েছে ভিন্ন রূপে। সঙ্গে রয়ে গেছে শুভ্র কাশফুল। তবুও বাকি থেকে যায় শরৎ বন্দনা। সেই বন্দনারই যথারীতি আয়োজন করা হয়েছে চারুকলার বকুল তলায়। সেখানে রবীঠাকুরের গানের ছন্দে বন্দনার সুর ছড়িয়েছেন ছায়ানটের শিল্পীরা। বকুলতলার চারপাশটা ঘিরে তখন আসন্ন হেমন্তের কুয়াশার ফিকে চাদর। ষষ্ঠী পূজোর মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মীরাও মেতেছেন শারদোৎসবে। সুর আর বন্দনায় একাকার শারদীয় সকাল।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ‘ওগো শেফালি বনের মনের কামনা’ গানটির সম্মিলিত পরিবেশনায় সুর-গীতি-নৃত্যে শুরু হয় শরৎ বন্দনা। পরে শিল্পী অভয়া দত্ত শোনান রবীন্দ্রঙ্গীত ‘আমার রাত পোহাল’। এরপরের পরিবেশনায় রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী মজুমদার শোনান ‘অমল ধবল পালে লেগেছে...’। সুতপা সাহা শোনান রবীন্দ্রনাথের ‘ওগো কে যায় বাঁশরি’, মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য পরিবেশন করেন ‘আমি চঞ্চল হে’ তানিয়া মান্নান শোনান ‘এসো শরতের অমল মহিমা’।
এরপর শ্রেয়া ঘোষের কণ্ঠে ‘সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়’, আইরিন পারভীন অন্না ‘এই তো আমার প্রেম’, শুক্লা পাল সেতু শোনান ‘যে ছায়ারে ধরব বলে’, অসীম দত্ত পরিবেশন করেন ‘তোমার সোনার থালায়’, নাঈমা ইসলাম নাজ গেয়ে শোনান ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে’, প্রার্থ প্রতিম রায় ‘আমি চিনি গো চিনি’ এবং সেঁজুতি বড়ুয়া নিবেদন করেন ‘কেন যে মন ভোলে’।
সম্মেলক নৃত্য পর্বেও সব ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত। ছায়ানটের খুদে ও বড় শিল্পীদের দল ‘আলোর অমল কমল খানি’, ‘শরতে আজ কোন অতিথি’, ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’, ‘শরত তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’, ‘আজ ধানের ক্ষেতে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। ‘তোমার যা বল তাই বল’ গানটির সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ।
শরতের রাঙা সকালে বকুলতলায় অনেকেই শারদীয় পোশাকে নিজেকে রাঙিয়ে এসেছিলেন পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে। তারা দল বেঁধে এসেছিলেন শরতের সাজে, তাদের খোঁপায় ছিল শুভ্র গোলাপ। এ সময় মুড়ি-মুড়কির সঙ্গে সবাই উপভোগ করেছেন শরৎ সংগীত। এসেছিলেন ছায়ানটের প্রাণ সনজিদা খাতুনও।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানজিদা আফরোজ শিমু জানান, শারদীয়া দূর্গা পুজার ছুটিতে শরৎ উৎসবে বন্ধুরা মিলে একত্রিত হওয়াটাও বাড়তি আনন্দ।এই ব্যস্ত শহরে কখন কোন ঋতু আসে-যায় টেরই পাওয়া যায় না, এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে নতুন করে উপভোগ করতে পারি। এজন্য ছায়ানটকে ধন্যবাদ।
ছায়ানট সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসার বলেন, বাংলাদেশের মতো ছয় ঋতুর দেশ তো কোথাও পাওয়া যাবে না। আমরা যে প্রকৃতির সন্তান, তা এ ঋতুচক্রের মধ্য দিয়ে বুঝতে পারি। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঋতু চক্রের মতোই আমরা মিলেমিশে আছি। একইসঙ্গে এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের চর্চা করি। গানের মধ্য দিয়ে আমরা ঋতুর মতো সবার সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করি। সেই জায়গা থেকেই প্রীতি ও ভালোবাসার টানে সবার একত্রিত হওয়া।