×

জাতীয়

দেবীর আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ১১:২৮ এএম

দেবীর আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা
বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হয় দেবী দুর্গার বোধন। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হয় বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। ভক্তের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ। পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে দশভুজা দেবী দুর্গার ষষ্ঠী বিহিত পূজা। আর সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তকুল। সারাদেশে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। আজ বিকেলে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মিশনের মণ্ডপ পরিদর্শনে যাবেন রাষ্ট্রপতি। গতকাল মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে মহানগর এলাকার মন্দিরগুলোর প্রতি কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, ৮ অক্টোবর রাত ১০টার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন, পূজার মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, ভক্তিমূলক সঙ্গীত ছাড়া অন্য সঙ্গীত বাজানো থেকে বিরত থাকা। এ ছাড়া গতকাল দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই। তারপরও পূজায় কোথাও হামলা হলে সেটি মোকাবেলার জন্য পুলিশের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজার প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, আমরা যেভাবে ঈদের উৎসব উদযাপন করি, ঠিক সেভাবেই আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শারদ উৎসব উদযাপন করবে ঢাকাবাসী। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন এবং স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। যার ফল হচ্ছে রোগ, শোক, হানাহানি-মারামারি বাড়বে। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজার আয়োজন করেছিলেন বলে দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দু মতে অকাল বোধনও বলা হয়। বাঙালির হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে। ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই উৎসবের মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী সপরিবারে তিন দিনের জন্য পিতৃগৃহে আগমন করেন। দেবীর দশ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে। যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে ওপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ন বাণ ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্ঠের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ দশটি অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না। মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষ্মী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক। প্রতি বছর বিভিন্ন বাহনে সপরিবারে শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী মর্ত্যলোকে আসেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। বছর বাদে মেয়ে আসছেন বাপের বাড়ি, মেয়েকে বরণ করতে তাই আয়োজনেরও কমতি নেই। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ দিনব্যাপী এ পূজার সব প্রস্তুতি। ধর্মীয় এ উৎসব ঘিরে বাংলাদেশ এখন আনন্দমুখর। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর রাজধানী ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে ২৩৭টি মণ্ডপে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App