×

জাতীয়

অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১৫ এএম

অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ
ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধার সুবাদে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ‘হাব’ হিসেবে ভ‚মিকা রাখতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৬ কোটি জনগণ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। হোটেল তাজ প্যালেসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে উদার বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষা, অটোমোটিভ শিল্প ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। গতানুগতিক খাতের বাইরে বাংলাদেশের শিক্ষা, হাল্কা শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিদেশি, বিশেষ করে ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করার এখনই সময়। শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর আমরা কোরিয়াতে ১২টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট রপ্তানি করেছি। বাংলাদেশে তৈরি চারটি জাহাজ ভারতে আসছে। সম্প্রতি রিলায়েন্স বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশে তৈরি রেফ্রিজারেটর কিনেছে। বাংলাদেশে ছয় লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সারের বিশাল গোষ্ঠী রয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। সরকারের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালে দেশের জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশই হবে শহুরে; যাদের অধিকাংশই হবে তরুণ, পরিশ্রমী এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় যুক্ত। অনেক দেশের মতো আমাদেরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আমরা জানি কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করতে হয়। এ বছর আমরা রেকর্ড ৮ দশমিক এক শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমরা দুই সংখ্যার কাছাকাছি রয়েছি। ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ১৮৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে সে ধরনের প্রযুক্তি সেবা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। এরই ফল হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশেই রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পঞ্চম বৃহৎ জনগোষ্ঠী। আমরা দ্রুত ক্যাশবিহীন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত বছর ই-কমার্স খাতে আমাদের লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ডলারের কাছাকাছি। বিদেশি বিনিয়োগের আইনি সুরক্ষা, বছরে বড় ধরনের প্রণোদনা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কছাড়, সহজে ব্যবসা ছাড়া, পুরো মুনাফা এবং মূলধন বিদেশে নেয়ার সুবিধা দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত-শোষণহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সেই লক্ষ্যই আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ এবং জনগণের আস্থাই বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নেতারা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভ‚তপূর্ব নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশে অভ‚তপূর্বভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। ভারতীয় বিনোয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। এর আগে সকাল সোয়া ৮টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ৯টা ৫০ মিনিটে দিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। সেখানে লালগালিচা বিছিয়ে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি বিমানবন্দরে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল তাজমহলে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা তার প্রথম ভারত সফরে ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরদিন ৬ অক্টোবর ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরির দায়িত্ব পাওয়া ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে দেখা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App