দেশের পরিসর বাড়াতে কিছুদিন আগে কানাডার উত্তরপূর্বে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবরটা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যান। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসিঠাট্টাও শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু বিষয়টি কেবলই হাসিঠাট্টায় উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।

দূর এবং নিকট অতীতেও দেশের আয়তন বাড়াতে মুদ্রার বিনিময়ে হাতবদল হয়েছে অনেক দেশ। দ্বাদশ শতকে বর্জেসের রাজা ওডো আরপিনাস তার অধীনে থাকা বর্জেস এবং ডান নামে দুটি দেশ ৬০ হাজার শিলিংয়ের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন তৎকালীন ফরাসি রাজা প্রথম ফিলিপের কাছে।

১১০১ সালে জেরুজালেমের ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে অংশ নেন ওডো। তার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে তিনি এই দুটি দেশ বেচে দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। স্কটল্যান্ডের পশ্চিম উপক‚লে গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত আইল-অব-ম্যান রাজ্যের মালিকানা চার হাজার রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে ১২৬৬ সালে স্কটল্যান্ডকে দিয়ে দেয় নরওয়ে।

১৭৩৩ সালে ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড সেন্ট ক্রয়েক্স ফ্রান্সের থেকে সাড়ে সাত লাখ লিবরায় কিনে নেয় ডেনমার্কের ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৭৫০ সালে জেনোয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কর্সিকা। ইতালির জেনোয়া তখন ফ্রান্সের সামরিক সাহায্য চেয়ে বসে। ফ্রান্স সাহায্য দিতে রাজি হয় এই শর্তে যে, জয়ের পর কর্সিকাকে ফ্রান্সের হাতে তুলে দিতে হবে।

১৭৬৮ সালে কর্সিকা পুরোপুরি ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮০৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলারের বিনিময়ে বিশাল লুইসিয়ানা রাজ্যটি কিনে নেয় আমেরিকা। চুক্তি স্বাক্ষর করেন ফ্রান্সের ফ্রানকো বারবে মারবয়ে এবং আমেরিকার জেমস মনরো ও রবার্ট লিভিংস্টোন। ১৮১৯ সালে ফের দেশ কেনে আমেরিকা। এবার ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে স্পেনের কাছ থেকে কিনে নেয় ফ্লোরিডা।

১৮৪৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি হয় মেক্সিকোর গুয়াদালুপ নিয়ে। ওই চুক্তিতে তৎকালীন দেড় কোটি ডলারের বিনিময়ে সোয়া পাঁচ লাখ বর্গমাইল অঞ্চল কিনে নেয় আমেরিকা যার মধ্যে পড়েছে বর্তমানে আরিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা এবং উটাহ শহরগুলো। রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দর কষাকষির পর ১৮৬৭ সালে সাত কোটি ২০ লাখ ডলারের বিনিময়ে আলাস্কা কিনে নেয় আমেরিকা।

স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় ১৮৯৮ সালে দুই কোটি ডলারের বিনিময়ে ফিলিপিন্স কিনে নেয় আমেরিকা। প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে এই চুক্তি মঞ্জুর হয়। ১৯০৩ সালে এক কোটি ডলারে পানামা খাল ও তার আশপাশের অঞ্চল ইজারা নেয় আমেরিকা। ১৯৯৯ সালে এই ইজারার সময়সীমা শেষ হলে ফের পানামা খালের মালিকানা পানামা সরকারকে ফিরিয়ে দেয় আমেরিকা।