×

মুক্তচিন্তা

আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রেনিটিডিন ওষুধের উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার পরও রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছে এই ক্ষতিকারক ওষুধ। এতে প্রতারিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো- রেনিটিডিন ট্যাবলেট বাজার থেকে সরিয়ে নিতে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা অপর্যাপ্ত। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) ১৩ সেপ্টেম্বর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেখানে দাবি করা হয়, রেনিটিডিন ওষুধে এন-নাইট্রোসোডিয়ামেথাইলামাইনের (এনডিএমএ) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এনডিএমএ প্রাণী দেহে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এই গবেষণার পরে বিশ্বব্যাপী রেনিটিডিনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজার থেকে রেনিটিডিন উঠিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বড় কোম্পানিই এই ওষুধ তৈরি করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঔষধ প্রশাসন গত রবিবার রেনিটিডিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো এই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না। এমনিতেই ভেজাল ও মানোত্তীর্ণ ওষুধে বাজার সয়লাব। প্রায়ই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় বাজারে নকল ও ভেজাল ওষুধের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের খবর। দেশে নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদনে ভুয়া কোম্পানি থেকে শুরু করে লাইসেন্সধারী কোম্পানি সবাই শামিল। কত ভুয়া কোম্পানি লুকিয়ে-ছাপিয়ে কত নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে তার কোনো হিসাব নেই। দেশের একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের বাজারে শতকরা ১০ ভাগ ভেজাল ওষুধ বিক্রি হয়। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। এসব তৎপরতা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। বাংলাদেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়াও হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। এরপরও এখানে ওষুধ টেস্টিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্যের কাছে প্রশাসনও যেন অসহায়। মিটফোর্ড এলাকায় গিয়ে মোবাইল কোর্টেরও হেনস্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোক এই নকল-ভেজাল ওষুধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেনিটিডিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় তাদের উৎপাদিত ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করেছে। আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে। এ জন্য আইনের দ্বারস্থ হতে হয়। ঔষধ প্রশাসন বলছে তারাও কাজ করছে এই ওষুধ সরিয়ে নিতে। আমরা চাই দ্রুত এসব ওষুধ বাজার থেকে অপসারণ করা হোক। ওষুধ খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচারব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে তৎপর হওয়া দরকার। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে আইন কঠোর করারও উদ্যোগ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App