×

জাতীয়

ভারতের ঘোষণায় উধাও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৭ এএম

ভারতের ঘোষণায় উধাও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ

ফাইল ছবি

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘একে তো নাচুনি বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বাড়ি’ ! প্রবাদটির যথার্থ চিত্র দেখা গেছে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে। এমনিতে দেশের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এর ওপর ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরপরই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ও খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ করে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা ভারতের ঘোষণার পরপরই পেঁয়াজের দাম একলাফে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিবারই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মুনাফা করলেও প্রশাসন থাকে নির্বিকার। গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরপরই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এতে করে নগরের সবকটি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি মিয়ানমারের পেঁয়াজেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারক ও আড়তদাররা। পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায় এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। অথচ আগের দিন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৮-৬০ টাকায়। একইভাবে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৮-৫০ টাকায়। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পাইকারিতে কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৮-৫২ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪৪-৪৫ টাকায়। এদিকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। জামালখান এলাকার গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পেঁয়াজের দাম এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। রান্নার জন্য অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ না কিনে খালি হাতে চলে এসেছি। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী আজমীর ভা-ারের পরিচালক এটিএম শামছুদ্দোহা খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সামনে আরো দাম বাড়তে পারে। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে অবিলম্বে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে। খুচরা ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন, ‘পাইকারি রেটে কিনতে এসে দেখি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গত কয়েক দিনে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারের বাইরে গুদামজাত করেছেন। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এ খবর চট্টগ্রামে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে ‘উধাও’ পেঁয়াজ। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সোলায়মান বাদশা বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধের প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই। আড়ত প্রায় খালি। ভারত যখন রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার করেছিল তখনই সরকারের মনিটরিং করার প্রয়োজন ছিল। খাতুনগঞ্জ ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ছগীর আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বারবার সরকারকে বলে আসছি যে, ভারতের ওপর নির্ভরশীল হওয়া কোনো অবস্থাতেই আমাদের জন্য শুভ হবে না। এরা যে কোনো সময়ই বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি। তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চায় না। অন্যান্য ভোগ্যপণ্য নিয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু পেঁয়াজ নিয়েই অমাদের এভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাজধানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেদ বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন। ভারত ছাড়া তুরস্ক, মিয়ানমার, মিসর, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App