×

জাতীয়

এবার দুদকের অ্যাকশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৮ এএম

এবার দুদকের অ্যাকশন
আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে এবার অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারকি কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে দুর্নীতি দমন কমিশনে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য নিশ্চিত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যেই দুদকের এই অ্যাকশন অপকর্মের হোতা ও তাদের গডফাদারদের কপালে নতুন করে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দুদক সূত্র জানায়, ক্যাসিনো ব্যবসা করে যারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে সংস্থাটি। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে খুব শিগগিরই তাদের সম্পদ বিবরণী চাইবে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান টিম। একইভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদ বিবরণী চাওয়া হবে। আয়কর বিবরণী, পাসপোর্টের তথ্যও চাইবে দুদক। এ ছাড়া সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আরো যেসব ভিআইপি ব্যক্তিদের নাম বেরিয়ে এসেছে, দুদক এদের সবারই সম্পদের অনুসন্ধান করবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে যে বা যারা জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে অনুসন্ধান টিমও গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই অনুসন্ধানপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, গণমাধ্যমে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যই কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এ বিষয়েও কমিশন যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। ক্যাসিনোকা- অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়া একজন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে জানান, ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সম্প্রতি র‌্যাব-পুলিশের হাতে আটককৃতদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে যারা অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের সম্পদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে কোনো প্রভাবশালীকে ছাড় দেয়া হবে না। যেসব মন্ত্রণালয়ে টেন্ডারে যথাযথ নয়ম মানা হয়নি, সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান দুদকের এই কর্মকর্তা। সম্প্রতি অবৈধ ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে র‌্যাব। এসব অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে। দুই সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। তখন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ধরতে অভিযান নামে র‌্যাব। ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার করার পর ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার আধুনিক আয়োজন ক্যাসিনোর সরঞ্জামের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ করে র‌্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ২৪ লাখ টাকাও। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি। গত বুধবার ঢাকার মতিঝিলের ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রে র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো মেলার পাশাপাশি সেগুলো পরিচালনায় যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরদিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে। ওই দিন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও বনানীর আহমদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার এবং ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. কাওসার ও ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদ চালান বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়, যেগুলো জুয়ার টাকায় তৈরি সম্পদ বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে গে-ারিয়া থানা কমিটির সহসভাপতি এনামুল হক এনু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন শেয়ারহোল্ডার। আর তার ভাই রুপন ভূঁইয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া গত ২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ডসহ ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত বুধবার রাতে মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে পাঁচ বোতল মদসহ ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন। লোকমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনিই ক্লাবের ঘর ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। আর ওই ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার। ক্যাসিনোর ভাড়া থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন লোকমান। অস্ট্রেলিয়ার দুটি এবং দেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার গচ্ছিত টাকার পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা। ঢাকার ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর সংগঠনটির চার নেতা গেছেন আত্মগোপনে। এরা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App