×

সাহিত্য

হাসন রাজার মরমিলোকে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই ছিল না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

হাসন রাজার মরমিলোকে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই ছিল না

মরমী কবি হাসন রাজা না বাউল না বৈষয়িক। নিষ্কাম-নিরাসক্তের সহজ সংজ্ঞাতেও ধরা যায় না তাঁকে। যদিও বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও প্রত্যাখান করেছেন ধনগৌরব। বেছে নিয়েছেন ছন্নছাড়া জীবন। বর্ণাঢ্য জীবনের বাঁক বদলের প্রতিটি মুহূর্তে যুগান্তর-জোয়ারে প্লাবিত জীবনের স্রোতধারা হাসন রাজাকে নতুন করে বোধে উত্তীর্ণ করেছে। তিনি হয়ে ওঠেন গীতিকবি, সুরকার ও মহাজন-গায়েন।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে জাতীয় হাসন রাজা পরিষদ আয়োজিত ৪র্থ জাতীয় হাসন রাজা লোক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার, বাংলাদেশে ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ মনজুর হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অগ্রনী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্ উল ইসলাম ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো: শিরীন, কপিরাইটস অফিসের রেজিস্ট্রার রাজা চৌধুরী কবি সাদিয়া চৌধুরী পরাগ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক ড.এ কে এ মুবিন।

হাসন রাজার মরমিলোকে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই ছিল না উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোহাম্মদ নজিবুর রহমান বলেন, আমি তিনটি কারণে এই অনুষ্ঠানে এসেছি। প্রথমত আমার বাড়ি যেহেতু সুনামগঞ্জে, সেখানে সবচেয়ে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি যারা আছেন তারমধ্যে মরমী কবি হাসন রাজা অন্যতম। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছি। দ্বিতীয় এই সংগঠনে যারা জড়িত আছেন তাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। তৃতীয়ত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এই জ্ঞান ভিত্তিক সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে দেশে যত মুনি-ঋষি আছেন তাদেরকে সম্মান দেখানো, তাদের যে কার্যক্রম ও জীবনকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা। বাঙ্গালি, দেশ ও জাতীয় সংস্কৃতির মুলধারায় এক সুপরিচিত নাম হাসন রাজা। তার গান এই অঞ্চলের মরমি সঙ্গীত ও আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনার জগতকে আরো প্রসারিত করেছে।

তিনি বলেন, তাকে নিয়ে আমরা সিলেটবাসী অনেক গর্ব করি। আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবনায় তিনি রেখে গেছেন এক মহান আদর্শ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসংশিত সাত শতাধিক গানের রচয়িতা মরমী কবি হাসন রাজা। অল্প বয়স থেকে তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে থাকেন। মায়ের কষ্ট অনুভব, বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু, প্রকৃতির সৈন্দর্য আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি অনেক শিখিয়েছে, অনেক আধ্যাত্মিক ভাবানুভূতির দ্যুতনা সৃষ্টি করেছে। দেশ জাতি তার কাছে ঋণি। এখন সময় এসেছে হাসন রাজাকে পূর্ণ গবেষণা ও চর্চার মধ্যদিয়ে তার গান ও দর্শনকে সঠিকভাবে তুলে ধরার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাসন রাজার জীবন ও কর্মের উপর ‘সুরমা পাড়ের গানের রাজা’ নামে একটি স্মরণীকা প্রকাশ করা হয়। স্মরণীকাটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান।

এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন হাসন রাজা মিউজিয়াম ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সামারীন দেওয়ান।

বক্তারা বলেন, মরমিসাধনার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে জাতধর্ম আর ভেদবুদ্ধির ওপরে ওঠা। সব ধর্মের নির্যাস, সব সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যই আধ্যাত্ম-উপলব্ধির ভেতর দিয়ে সাধক আপন করে নেন। হাসন রাজার অনুভবে ধর্মের এক অভিন্ন রূপ ধরা পড়ে সম্প্রদায় ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করে।

অন্যান্য অতিথিরা বলেন, হাসন রাজার পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হাসন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় অনেক আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। তার গানে প্রেম ও বৈরাগ্যময় আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে।

আলোচনা শেষে বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় হাসন রাজার কালজয়ী সব গান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App