×

জাতীয়

মীজানুর ১৯৮০ সালে জম্মেও কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১০ পিএম

মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, কিন্তু একজন ১৯৮০ সালে জম্মেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কীভাবে নথিভুক্ত হলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির সদস্যদের কয়েকজন প্রশ্ন তোলেন, ১৯৮০ সালে জম্ম গ্রহন করেন মীজানুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের ১০-১১ বছর পরে জম্ম নিয়ে কীভাবে তিনি এ তালিকায় অন্তভূক্ত হলেন। শুধু এই ব্যক্তিই নয় তালিকায় এমনও অনেকের নাম রয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধের পরে বা ২-৫ বছর আগে জম্মেছেন মাত্র। তাহলে তারাওবা কীভাবে তালিকাভ’ক্ত হন। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভ’য়ো মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেবার সুপারিশ করা হয়েছে। আজ সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৭ম বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি বলেন, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে জম্মেও মীজানুর রহমান নামে একজন ভ’য়ো মুক্তিযেদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। তিনি ১৯৮০ সালে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের ১০ বছর পর জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। মীজানুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজিগাঁও গ্রামে। বাবার নাম আবদুল মজিদ, মা দিলরুবা খানম। ১৯৮০ সালের ৩ জুলাই জন্ম হয় মীজানুর রহমানের। এ বিষয়ে আজ বিকেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এটি হয়েছে আদালতের নির্দেশে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নূণ্যতম বয়স ১০ বছর নির্ধারণ করে যাদের বয়স তার চেয়ে কম বা ‘৭১ সালের পরে জম্মেছে এমন ২৬ জন ভ’য়ো মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আবেদন করায় হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের বিষয়টি বাতিল করে ওদেরকে অন্তর্ভূক্তির আদেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁর বয়স ৩ বছর ছিল তাঁকেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের এমন নির্দেশে তিনি বিব্রত বলে জানান। শুধু মীজানুর রহমান নন, নিখিল রঞ্জন সাহা যার বয়স ৭১ সালে ছিল মাত্র ৩ বছর। আদালতের নির্দেশে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ বহাল রাখা হয়েছে। গাইবান্ধার নিখিলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩০ মার্চ। এবিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জানান, আজকের ( সোমবারের) বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে ভ’য়ো মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এসময় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ‘৭১ সালে ৪-৫ বছর বয়স ছিল এমন বা মুক্তিযুদ্ধের পরে জম্ম গ্রহণ করেছে এমন নামও তালিকা ভুক্ত রয়েছে বলে কমিটিকে অবহিত করা হয়। আমরা এদের বাদ দেবার কথা বলেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ জানান, ২০১৩ সালে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ২ হাজার ৩৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়ে তাঁদের নামে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট জারি করার অনুরোধ জানানো হয়। সেই সময় দলগতভাবে তাঁদের নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ইস্যু করা হয়। এদিকে গেজেট প্রকাশের পর ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সঠিকতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১০ বছর। কিন্তু তালিকায় কয়েকজনের বয়স ছিল ১০ বছরের কমবা জম্ম ‘৭১ এর পরে। এই যুক্তিতে ২০১৪ সালে দলগত গেজেটের সবার নাম বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলে আদালত তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৩৬৭ জনের সবার নামে জারি করা গেজেট বহাল রাখার আদেশ দেন। যার ফলে অনেক ভ’য়ো মুক্তিযোদ্ধা তালিকাতে ঢুকে পড়ে। তবে বৈঠকে রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান কাজী ফিরোজ রশিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App