×

জাতীয়

বিয়ে রুখে স্বপ্নজয়ের পথে হাঁটছে সাহসী কিশোরীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১৬ এএম

বিয়ে রুখে স্বপ্নজয়ের পথে হাঁটছে সাহসী কিশোরীরা
বিয়ে রুখে স্বপ্নজয়ের পথে হাঁটছে সাহসী কিশোরীরা
বাবা-মা এমন কি পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করছে সাহসী কিশোরীরা। বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেয়ে তারা আরো বেশি মনোযোগী হচ্ছে লেখাপড়ায়, যা শেষ হলে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারা, সচ্ছলতা আনতে চায় অভাবের সংসারে। শুধু পরিবার থেকেই নয়, সমাজ থেকেও বাল্যবিয়ের অভিশাপ দূর করার দৃঢ় প্রত্যয় তাদের। তেমনই দুই সাহসী কিশোরী ঝালকাঠির ফাতেমা আক্তার রুমি ও নওগাঁর মিতু বানু। বাবা-মা আর পাঁচ ভাইবোনের সংসার রুমিদের। ও তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। রুমির বাবা বেশ কয়েকবার ওর বিয়ের উদ্যোগ নেন। কিন্তু প্রতিবারই সবার অমতে গিয়ে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বন্ধুদের সহযোগিতায় সেই উদ্যোগ বন্ধ করে রুমি। এ নিয়ে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয় রুমিকে। কিন্তু রুমি অটল। ১৮ বছরের আগে কোনোভাবেই বিয়ে করবে না সে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হবে, পরিবার চালানোর কাজে বাবার সঙ্গে হাল ধরবে। তারপর বিয়ে। সেই পথেই ধীরে ধীরে মেয়েটি এগিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নের দিকে। রুমি এখন ঝালকাঠি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মিতুর ঘটনাও একই রকম। বিয়ের জন্য তার বাবা বারবার চাপ দিচ্ছে তাকে। কিন্তু মিতু এখনই বিয়ে করতে চায় না। বাল্যবিয়ের কুফলসম্পর্কে জানা আছে তার। এও জানে, এখন যারা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, লেখাপড়া করে যখন মিতু একটা ভারলা চাকরি করবে তখন তারা আরো খুশি হবে। শিশু অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলেন, বাল্যবিয়ে ছেলেমেয়ে উভয়েরই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। এর পরিণতিতে শুধু তারাই নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো পরিবার। প্রথম শিকার হয় শিশু, দ্বিতীয় শিকার নারী এবং তৃতীয় শিকার সমাজ। মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণে বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে মেয়েরা এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। অনেক সময় মেয়েরা নিজেরা উদ্যোগী হয়েই বাল্যবিয়ে বন্ধ করছে। এই খবরগুলো যখন প্রচার হবে তখন অন্যান্য অঞ্চলের ছেলেমেয়েরাও এই বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হবে। দেশে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লেও বাল্যবিয়ে থেমে নেই। এখনো দেশের অনেক শিশুর শৈশব গ্রাস করছে বাল্যবিয়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাল্যবিয়ের ঘটনা এবং বাল্যবিয়ে থেকে উদ্ধারের ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসে। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের অবস্থা সম্পর্কে জানতে ২০১৮ সালে জরিপের কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা। প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে বাল্যবিয়ের হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। গ্রামে এ হার ৫৪ শতাংশ আর শহরে ৪৪ শতাংশ। জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি বলেন, বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। মেয়েরাও সাহসী হয়ে উঠছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সালমা আলী বলেন, বাল্যবিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃত একটি সমস্যা। প্রতি বছর ঠিক কতটি বাল্যবিয়ে হচ্ছে এর সঠিক কোনো সংখ্যা আমাদের জানা নেই। প্রতিদিন যে পরিমাণ বাল্যবিয়ে হয় সে তুলনায় বাল্যবিয়ে বন্ধে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা কম। সেই সঙ্গে মোবাইল কোর্টে যে শাস্তি দেয়া হয় তা দৃষ্টান্তমূলক নয়। জাতীয় কন্যাশিশু দিবস আজ : কন্যাশিশুর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ ও তাদের প্রতি বৈষম্যহীন আচরণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়কে সামনে রেখে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। তবে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হবে আগামী ১১ অক্টোবর। দিবসটিকে সামনে রেখে আজ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App