×

জাতীয়

জি কে শামীমের টাকার খোঁজে একাধিক সংস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০২ এএম

জি কে শামীমের টাকার খোঁজে একাধিক সংস্থা
‘টেন্ডার সম্রাট’ গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম। টাকা দিয়েই সব কিছু কিনে আধিপত্য বিরাজ করে আসছিলেন তিনি। টাকা দিয়েই ‘যুবলীগের নেতা’ পরিচয় অর্জন করেন। কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। এবার তার ব্যাংক হিসাব ও আর্থিক লেনদেন যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক সংস্থা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, শুধু নগদ টাকাই নয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা প্রভাবশালীদের ব্যাংকে বদলি করেছেন তিনি। বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছেন বিদেশের একাধিক ব্যাংকে। আসলে কত টাকার মালিক জি কে শামীম? এ নিয়ে সবাই চুপ। এনবিআর বলছে, তদন্ত চলছে। তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। মন্তব্য করতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তারাও। জানা গেছে, অবৈধ টাকা লুকিয়ে রাখতে নামে-বেনামে ব্যাংক হিসাব খোলেন জি কে শামিম। বাড়ির কেয়ারটেকার, নিরাপত্তারক্ষী, দূর সম্পর্কের আত্মীয় থেকে শুরু করে নিজের পরিবারের প্রায় অধিকাংশের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অর্থ পাচার মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তার সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, সিআইডির পাঠানো চিঠির তথ্য জানাতে বিএফআইইউ পুরোদমে কাজ করছে। এ বিষয়ে সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অর্থ পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা তার আর্থিক অপরাধের তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তার সবগুলো ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউকে চিঠি পাঠিয়েছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য দিবে তারা। তিনি দেশের বাইরে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করছেন, সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব যখন তাকে গ্রেপ্তার করে তখন সেখানে ব্যাংকের চেকবই, এফডিআর, অ্যাকাউন্টের হিসাব অনুযায়ী ৩০০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে নেয়ার পরে হয়তো আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। সূত্র জানায়, জি কে শামীম ৩৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে খোলা এসব অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগই জি কে শামীম ও তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জিকেবি এন্ড কোম্পানির নামে। এ ছাড়া তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। শামীমের স্ত্রী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ভাই ও মায়ের নামেও কয়েকটি অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমা রয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলো বর্তমানে ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র অনুযায়ী, জি কে শামীমের কোম্পানির একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ কয়েকটি সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের পরই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিনি ঘুষ বা কমিশন হিসেবে এসব টাকা পাঠাতেন। বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেনে জি কে শামীমের নামে যেসব ব্যাংক হিসাব খোলা হয় তার মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মহাখালী শাখার হিসাব নম্বর ৪০৩৮১১১০০০০০৩৫৪, ৪০৩৮১২৪০০০০০০২৫ অন্যতম। এ ছাড়া গুলশান লিংক রোডের ইসলামি ব্যাংকিং ধারার একটি শাখায় হিসাব নম্বর ১৬৪১০২০০০০৮২৫, ১৬৪১২২০০০০০৮৫ ও ১৬৪১০২০০০১১৪১ এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড নর্থ শাহাজাহানপুর শাখার অ্যাকাউন্ট নম্বর ০০১১১০০১১৪৮৯২ ও ০০১২১০০০২১৮০১ এ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। সূত্র জানায়, শামীম তার লাইসেন্স ভাড়া দিয়েও অর্থ হাতিয়ে নেন। অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের নামে বড় বড় কাজ নিতেন। ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় জামাল অ্যান্ড কোং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তিনি যৌথ হিসাব খোলেন। এর নম্বর ০০৩৫০২১০০০৩০৮৩। এই অ্যাকাউন্টে কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গেও যৌথভাবে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার। যার নম্বর ০০৩৫০২১০০০৩০০১। জি কে শামীমের সঙ্গে বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড নোয়াখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের একক ঠিকাদার। জামাল এন্ড কোং-এর সঙ্গে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন স্থানেও যৌথভাবে কাজ করত। উভয় প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। জানা গেছে, জিকেবি এন্ড টিইএ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগে কাজ করে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক এশিয়ায় খোলা যৌথ অ্যাকাউন্ট নম্বর হচ্ছে- ০০৩৫-০২১০০০২৬৪৬। এদিকে, কেউ যাতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে অন্যত্র সরিয়ে নিতে না পারে, সে জন্য কোটি টাকার ওপর লেনদেনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সিআইডিকে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী যুবলীগ নেতাদের নামে-বেনামে কত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তার অনুসন্ধান চলছে। দুটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত দুই যুবলীগ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একাধিক সংস্থা চিঠি দিয়েছে। দুজন নেতার একজন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ঋণ কেলেঙ্কারির কারখানা হিসেবে পরিচিত বেসিক ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক আলমগীর হোসেন। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক কিরণ নামের আরেক যুবলীগ নেতার ব্যাংক লেনদেনের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App