×

জাতীয়

সম্রাটকে নিয়ে লুকোচুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪৪ এএম

সম্রাটকে নিয়ে লুকোচুরি
সম্রাট কোথায়? সম্রাট কি বিদেশে পালিয়েছেন? সম্রাট কি দেশের ভেতরেই কোনো গডফাদারের আশ্রয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন? নাকি আছেন কোনো ‘বাহিনী’ বা সংস্থার কবজায়? দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই জনমনে এমন অসংখ্য প্রশ্ন উচ্চারিত হয় বারবার। গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকেও এ প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই আলোচিত হতে থাকে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নাম। কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি। তবে তার বক্তব্য থেকে একটা ইঙ্গিত মিলেছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্রাটের নাম সর্বাধিক আলোচিত হলেও তাকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চলছে লুকোচুরি। ঢাকঢোল পিটিয়ে সহযোগীদের আটক করা হয়েছে। তবে সম্রাট এখনো অধরা। তাকে ধরতে অভিযানেরও কোনো খবর নেই। সম্রাট আটক হয়েছেন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কবজায় রয়েছেন বলে খবর রটলেও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার নাম ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার নাম। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্যাসিনোর শেকড় উপড়ে ফেলতে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও সম্রাট পার পেয়ে গেলে গোটা অভিযান নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাবে। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেপ্তার হয়েছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাব শিগগিরই জানা যাবে। অপেক্ষা করুন, যা ঘটে দেখবেন। সম্রাটও গ্রেপ্তার হবেন, এমন আশাবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্রাট হোক বা যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবই। আমি এটা এখনো বলছি, সম্রাট বলে নয়; যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। আপনারা সময় হলেই দেখবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান চালাচ্ছি। আপনারাও দেখছেন। অপরাধ ঘটছে বা যারা অপরাধ ঘটাচ্ছে এমন খবর যখনই পাব, তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ১১টি ক্যাসিনোর নাটেরগুরু সম্রাটের উত্থানের পেছনে ভোলার সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের আশীর্বাদ রয়েছে। কাকরাইলে সম্রাটের অফিসে শাওনের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। মেসার্স নাওয়েল ইন্টারপ্রাইজের মালিক শাওন আগে ঢাকা মহানগর যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। নগর ভবনের ঠিকাদারিতে তার খবরদারি রয়েছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে শাওন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সম্রাটের মাথার ওপর যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বসহ আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ছায়া রয়েছে। সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মহিউদ্দিন মহির আশীর্বাদ পেয়েছেন সম্রাট। কাকরাইলে সম্রাটের অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছিল যুবজাগরণ ও যুব গবেষণা সেল। চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন সম্রাট। তারকা হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ’য় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। নেপাল, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে তার রয়েছে সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে। যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার দুই ছেলের বিয়েতে তিনি দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলেও চাউর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোট-বড় বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার ‘গুডবুকে’ ছিল তার নাম। ক্যাসিনো ও জুয়া ছাড়া গণপূর্ত এবং রেলের অনেক ঠিকাদারি কাজে সম্রাটের কর্তৃত্ব ছিল। তার কাছ থেকে সুবিধাভোগীর তালিকাও দীর্ঘ। র‌্যাব-পুলিশের কাছে তাদের একটি তালিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, সম্রাট চেষ্টা তদবির করেও দেশত্যাগ করতে পারেননি। চিকিৎসার কথা বলে তিনি সিঙ্গাপুর যাওয়ার চেষ্টা করলেও সবুজ সংকেত না পেয়ে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। তবে তিনি অফিস বা নিজ বাসায় নেই, আত্মগোপনে আছেন। তবে তাকে নিয়ে এত রাখঢাকের পেছনে রয়েছে দল ও সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন। সম্রাটের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রাজনৈতিক নেতা, এমপি ও মন্ত্রীর নাম। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অনুষ্ঠিত সভায় জুয়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সম্রাট জড়িত উল্লেখ করে উষ্মা প্রকাশ করার পর শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। মতিঝিলের ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি সম্রাটের ছায়ায় থাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইয়ংমেনস ক্লাবের কর্ণধার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গণপূর্তের একচ্ছত্র অধিপতি জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেও ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক সম্রাটের ব্যাপারে তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাকে ধরতে বনানী ডিওএইচএস এর বাসা ও কাকরাইল অফিসে কোনো অভিযান চালানোর খবর এখনো পাওয়া যায়নি। জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে খালেদ-জি কে শামীম, ফিরোজ ও লোকমান : রিমান্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, গণপূর্তের একচ্ছত্র ঠিকাদার জি কে শামীম ও মোহামেডান ক্লাবের লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ডে থাকা তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের যে নাম প্রকাশ করেছেন, সেই তালিকা দীর্ঘ। তাদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের নামও পেয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App