×

মুক্তচিন্তা

অভিযুক্তদের ছাড় নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪২ পিএম

পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যের বহুবিধ অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার খবর প্রায়ই প্রকাশ পায়, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করে, একই সঙ্গে তাদের ওপর জনগণের আস্থায়ও চিড় ধরায়। গতকাল ভোরের কাগজে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের অপরাধবিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, খাগড়াছড়ি-৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে ৭১ লাখ টাকার সংস্কার কাজে অনিয়ম হয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরুর ২০ দিনের মধ্যেই ১০০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে পুরো টাকা। অথচ ৪ মাস পরে তদারক কমিটি দেখতে পায় কাজের মাত্র ১৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। খাগড়াছড়ি-৬ এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীতে। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার নবাবপুরের ২২১ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া শহীদ বুদ্ধিজীবী এ কে এম শামসুল হক খানের ৪ কাঠা পরিমাণের একটি বাড়ি দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ ওঠে তৎকালীন লালবাগ জোনের ডিসি ওই প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেন। সবশেষ রাজধানীতে ক্যাসিনো বাণিজ্য ঘিরেও পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স, মতিঝিল বিভাগ ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। সমাজে অপরাধ প্রবণতা রোধ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্যই পুলিশি ব্যবস্থার প্রবর্তন। পুলিশ হবে জনগণের রক্ষক। কিন্তু জনগণের রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেখা যায়, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এসব তো একেবারেই মামুলি অপরাধ, উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, খুনের মতো বড় বড় অপরাধকর্মেও এ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সাধারণত মানুষ কোনো বিপদে পড়লে প্রথমে পুলিশ বাহিনীর দ্বারস্থ হবে, এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু এখন হচ্ছে যেন উল্টো। মানুষ পারতপক্ষে কোনো সাহায্য চেয়ে বা অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চায় না। এমতাবস্থায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাজ অপরাধ দমন। অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। কারণ এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। ২ লক্ষাধিক পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে পুলিশ বাহিনী। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন অপরাধ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত বছরও প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি, অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার। বলতেই হয়, এত অভিযোগ, অসন্তোষের পরও দেশের সাধারণ মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল পুলিশ। সেই আস্থার জায়গাটাকে মজবুত করতে হবে যে কোনোভাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App