×

জাতীয়

হল সংসদের বাজেটই হয়নি, প্রত্যাশায় হোঁচট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১১ এএম

হল সংসদের বাজেটই হয়নি, প্রত্যাশায় হোঁচট
দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বার্ষিক বাজেট হয়নি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হল সংসদগুলোর। ফলে বাজেট ছাড়াই চলছে ১৮টি হল সংসদ। এমনকি কবে বাজেট হবে, তাও জানেন না কেউই। আপাতত বিভিন্ন কার্যক্রমের খরচ হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। এতে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা প্রতিফলিত হচ্ছে না বাস্তবে। ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দুই প্যানেলেরই নির্বাচনী ইশতেহার ছিল- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন, গণরুম-গেস্টরুম প্রথা উচ্ছেদ, অছাত্র-বহিরাগত বিতাড়ন, সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, পরিবহন সমস্যার সমাধান, ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল, ক্যাম্পাসে বাইরের যান চলাচল বন্ধ করা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর নতুন নেতৃত্বের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও একটু বেশি। কিন্তু বিগত ছয় মাসে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কার্যকর ভ‚মিকা গ্রহণ করতে পারেননি ডাকসু নেতারা। গত ছয় মাসে আনুষ্ঠানিক সভা হয়েছে দুটি, ২৩ মার্চ ও ৩০ মে। ডাকসুর জন্য বাজেট পাস হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। তবে কোনো হলেই বাজেট দেয়া হয়নি। জানতে চাইলে শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের হল সংসদের খসড়া বাজেট তৈরি করেছি। পূর্ণাঙ্গ বাজেট এখনো তৈরি করা হয়নি। বাজেট নিয়ে আমরা তিনটি মিটিং করেছি। বাজেট ছাড়া কাজ করছেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে কাজ করব তার চাহিদা হল অফিসের কাছে দিই। তারপর তারা তা অনুমোদন করে আমাদের অর্থ ছাড় দেয়। আমরা তা দিয়েই কাজ করি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ প্রক্রিয়ায় আমাদের একটু সমস্যা হয়। আমাদের একটা অর্থ ছাড়ের জন্য পাঁচ-ছয়বার হল অফিসে যেতে হয়। পড়াশোনা করে এভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে আমাদের অসুবিধা হয়। হল সংসদের জন্য ১০ লাখ টাকার একটি খসড়া বাজেট তৈরি করেছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদিত হয়নি। এ ব্যাপারে ভিপি কামাল উদ্দীন ভোরের কাগজকে বলেন, হল উন্নয়ন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের দেয়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আমাদের হল সংসদকে দেয়া হয়েছে। আমাদের ঘাটতি বাজেট ৮ লাখ টাকা। এ ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা যায় তা নিয়ে আমরা হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। আর হল উন্নয়ন ফির নামে যে অর্থ আমরা পেয়েছি তা থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ করছি। জানা গেছে, হলগুলোতে এখনো গণরুম-গেস্টরুম চলছে ফ্রি স্ট্রাইলে। রয়েছে বহিরাগত-অছাত্রদের দৌরাত্ম্য। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দাপটের কথাও বলেছেন কেউ কেউ। উন্নত হয়নি ক্যান্টিনের খাবার মান। জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শ্যামজিৎ পাল বলেন, এসব কাজও বিচ্ছিন্নভাবে ডাকসুর কিছু সদস্য করেছেন। সম্মিলিতভাবে ডাকসুর কোনো পদক্ষেপ এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাার্ষিক বাজেট না হওয়ায় ডাকসু হল সংসদ কাজ করছে না এটা ঠিক না। সুফিয়া কামাল হল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে পরিবহন বাড়ানো হয়েছে। লাইব্রেরি খোলার সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের অচলায়ন ভেঙে যাত্রা শুরু করেছে ডাকসু। ধীরে ধীরে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে বিশ^বিদ্যালয়কে স্বপ্নের বিশ^বিদ্যালয়ে পরিণত করা হবে। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদা হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। এটি আমরা করতে পারিনি। গণরুম-গেস্টরুমে ক্ষমতাসীনদের দখলদারত্ব এবং নির্যাতন বন্ধ হয়নি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এখনো হলগুলোতে বহিরাগত এবং অছাত্ররা রয়েছেন। প্রশাসন নির্বিকার। ছাত্রলীগের কাছে অলিখিত ইজারা দেয়া হয়েছে। তাদের ক্ষমতার দাপটে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। বাজেট না হলে হল সংসদ কেমন করে চলব- এই প্রশ্নটি শিক্ষার্থীদের মতো আমারো। কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র হলগুলোতে আমাকে ঢুকতেই দেয়া হয় না। আমি কাজ করতে চাই, সহযোগিতা কম পাচ্ছি। এদিকে হল সংসদের সুনির্দিষ্ট কোনো বাজেট থাকে না বলে জানিয়েছেন হল একাধিক সংসদ সভাপতি। তাদের মতে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই হল সংসদের ফি নেয়া হয়। এ ব্যাপারে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদ সভাপতি ও প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, হল সংসদের আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো বাজেট নেই। প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের প্রদেয় হল সংসদ ফি এবং হলের বিভিন্ন ইভেন্টের যে বরাদ্দ থাকে তা থেকেই মূলত হল সংসদ খরচ করে থাকে। আমাদের হল সংসদও এভাবেই চলছে। আমরা সংসদের নেতাদের সঙ্গে বসব। তাদের স্বদিচ্ছা থাকলে আমরা একটা খসড়া বাজেট প্রণয়ন করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App