×

জাতীয়

‘সড়ক পরিবহন আইন’ না করার আহ্বান: টিআইবির উদ্বেগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:০৪ পিএম

বহুল প্রতীক্ষিত ‘সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮’ বাস্তবায়নের পূর্বেই সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া ও চাপের মুখে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগের সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জনস্বার্থবিরোধী, অন্যায্য ও আত্মঘাতী চাপে প্রভাবিত না হয়ে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার, সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিপন্থী উদ্যোগ প্রতিহতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮’ এর গেজেট জারি হয়। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এখনও আইনটি বাস্তবায়ন করেনি সরকার। ফলে সড়কেও শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া ও চাপে সরকার যদি নতিস্বীকার করে তা হবে আদালত অবমাননা ও জনস্বার্থের পরিপন্থী।

বিশেষ করে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গঠিত কমিটির বৈঠকে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা দাবি-দাওয়া সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গের জন্য সাজার মেয়াদ কমানোর দাবিটি সরাসরি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া আইনের সব ধারা জামিনযোগ্যসহ অর্থদণ্ড হ্রাস করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা, ইত্যাদি অধিকাংশ দাবি-দাওয়া সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সুশাসন, ন্যায়বিচার, জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কোনোভাবেই সহায়ক হবে না।

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের এ সংক্রান্ত আইনের সাথে তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সামঞ্জস্যের যুক্তি উল্লেখ করা হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে প্রভাবিত হয়েই যে আইনটিকে দুর্বল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, তা সহজেই বোধগম্য। স্বার্থের সংঘাতে জর্জরিত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদই ষড়যন্ত্রের কাছে নতজানু হয়ে একদিকে সড়ক পরিবহনের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা ও নৈরাজ্যের সুরক্ষার পথ অবলম্বন করছে অন্যদিকে বিশ্বনন্দিত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদর দাবিকে অবজ্ঞা করার চরম নিষ্ঠুর দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।

সড়ক ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলা নৈরাজ্যের মুখে গত বছরের মাঝামাঝি নিরাপদ সড়কসহ সড়ক পরিবহন খাতে জবাবদিহি, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের দাবিতে শিশু-কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ আইনটির বিরোধিতা করে তা বাতিলের দাবিতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ পর্যায়ে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনটির উল্লেখিত পরিবর্তন এ খাতে নৈরাজ্য নিরসনে গৃহীত সব অগ্রগতিকেই হুমকির মুখে ফেলে দেবে। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের নতিস্বীকার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।

একই সাথে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়ন ও দুর্ঘটনারোধে প্রধানমন্ত্রীর ছয় নির্দেশনার আলোকে আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে এর বিধিমালা প্রণয়ন এবং তরুণ প্রজন্মসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে উপ-কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে দাখিল করতে যাচ্ছেন বলে জানান। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির মুখে আইনটি বাস্তবায়নের আগেই ‘সংশোধন’ হচ্ছে- এমন আশঙ্কাও প্রকাশ পায়। এ আশঙ্কা প্রসঙ্গে ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা আইনটি যখন তৈরি করেছি, তখন তাদের (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। সেই দাবি-দাওয়া সম্পূর্ণভাবে আইনে আসেনি, এটি তাদের ডিমান্ড ছিল। সেজন্য পাস হওয়া আইন প্রয়োগের কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে সেটা আমরা দেখার জন্য বসেছি। এর মানে আইনটি আবার সংশোধন হতে পারে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, এটা হতে পারে। যদি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল মনে করে আইনটি সংশোধন হতে পারে তাহলে তারা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদে নিয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App