×

মুক্তচিন্তা

চার দফা সুপারিশ মানতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম

জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বিশ্বে নানা অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত আর্থিক মন্দার পরও বাংলাদেশ গত ১০ বছর ধরে সমৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে চার দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছেন এবং দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘে নতুন করে উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারকে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য করলেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খুলবে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্পেকটেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। এ সময়ে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটেছে। যা ১৮৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা বেড়ে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতি অগ্রগতির এই পরিসংখ্যান অবশ্যই ইতিবাচক। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে; বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবগুলো বিশ্বসম্প্রদায়কে বিবেচনায় নিতে হবে। তাহলে আমরা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাব। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের আগস্টে আরো প্রায় পাঁচ লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেছে। ভূমি স্বল্পতা আর সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ তাদের আশ্রয়, খাবার আর জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। প্রস্তাবগুলোর অগ্রগতি আমাদের জানা। শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের এমন নিষ্ক্রিয়তা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন দেখিনি। দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা পিছিয়ে যায়। আমরা আরো মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় জাতিসংঘকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, তাদের দুর্দশা লাঘব, বাংলাদেশকে বিশাল শরণার্থীর ভার থেকে মুক্ত করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App