×

সাময়িকী

শেখ হাসিনার জন্য এলিজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:১২ পিএম

শেখ হাসিনার জন্য এলিজি

শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আগাছার মতো বেড়ে ওঠা কিছু মানুষ যা করছে তা ওই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতই শক্ত করছে, অনেকের আশা, বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা, শেখ হাসিনার স্বপ্ন নষ্ট করছে।

পাঁচ বছর আগে খুলনায় দক্ষিণ কেনো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভের কাজ শুরু করেছিলাম ১৭ মে। অনেকে বলেছিলেন, ১৭ মে কেন, ২০ মে নয় কেন? কারণ ২০ মে খুলনার চুকনগরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। আমার উত্তর ছিল ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা ফিরতে পেরেছিলেন নির্বাসন থেকে, তাঁর পিতামাতা ও পরিবারের সবাইর শহীদ হওয়ার পর। ১৯৭৫ সালের পর প্রায় অস্ত গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, ১৭ মে মনে হয়েছিল আমরা আমাদের দিন ফেরত পাব। আমাদের আশা ব্যর্থ হয়নি। উন্নয়নের চেয়ে আমাদের জেনারেশনের কাছে অগ্রাধিকার ছিল জামায়াত-বিএনপির পাকিস্তানিকরণ প্রচেষ্টা প্রতিরোধ। পাকিস্তানিকরণ রোধ উন্নয়নে সহায়তা করেছে। পাকিস্তান হচ্ছে ব্যর্থতার প্রতীক। আমাদের দেশে পাকিস্তানিকরণের এজেন্ট বিএনপি-জামায়াত ও ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারকারী দল। বঙ্গবন্ধু যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তাঁর কন্যা সেটিকে এগিয়ে নিলেন। মুক্তিযুদ্ধের জেনারেশনকে জিতিয়ে দিলেন অন্তিমে। অনেক সময় তাঁকে দেখে স্ফিংকসের কথা মনে হয়। কখনোবা ফিনিক্স পাখির। ফিরে আসার পর তাঁর জীবন ছিল না কুসুমাস্তীর্ণ। যে শোক তিনি পেয়েছিলেন সেই মানুষকে পাগল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। শামস তাবরেজি চলে যাওয়ার পর রুমি আর তাঁর পুরনো জীবন ফিরে পাননি। তাঁর শোকের ক্ষত থেকে তৈরি অমর কাব্য। শেখ হাসিনাও সেই ক্ষত নিয়ে তৈরি করলেন নতুন বাংলাদেশের গাথা। পিতার প্রতি, পরিবারের প্রতি, শহীদদের প্রতি এই হলো তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য। এই পথ পরিক্রমায় নিয়ত অপমান, নির্যাতন, হত্যা-চেষ্টার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু স্থৈর্য হারাননি। হাজার হাজার বছর পেরিয়েছে, স্ফিংকস একই জায়গায় স্থির। অনেকে চেষ্টা করেছে তাকে উৎখাত করার। পারেনি। শেখ হাসিনাকেও পারা যায়নি তাঁর পথ থেকে টলাতে। এই স্থৈর্য, শোককে জয় করার শক্তি আমাদের কতজনের আছে। ১৯৭৫ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে তিন দশক আমরা পেয়েছি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু খুন, ১৯৭১-১৯৭৫-এর খুনিদের পুনর্বাসন, ২০০১-২০০৬ সালের অগ্নি-সন্ত্রাসে মানুষ পুড়িয়া মারা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না করা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, দুর্নীতিতে বিশ্বের সেরা হওয়া, না এ তালিকা শেষ করা যাবে না। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। রাজনৈতিক নেতা [শেখ হাসিনা]দের খুন করা রাষ্ট্রীয়ভাবে, এক কথায় তরুণদের জন্য অন্ধকার এক বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ তরুণদের, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদের একাংশ যেমন প্রগতিবিরোধী তেমনি অন্য অংশ প্রগতির পক্ষে যারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছেন। তিনি তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উন্নয়নের, যে উন্নয়ন শুধু এগিয়ে যাবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের, দারিদ্র্য বিমোচনের। হাসিনা সেসব প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। তাদের উপহার দিয়েছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিলে প্রতিশ্রুতি রাখেন। সে জন্য তিনি সাধারণ রাজনীতিবিদদের কাতারে আর নেই। তিনি রাষ্ট্রনায়ক। আজ প্রায় প্রতিদিন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে দেখি কোনো না কোনো ক্ষেত্রে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁর কন্যাই পেরেছেন আবারও আমাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে, সম্মান বৃদ্ধিতে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হতে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার উজ্জীবন। ১৯৭৫-এর খুনিদের বিচার, অহেতুক কারণে নির্যাতন বন্ধ এবং যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার, খালেদা-তারেকের মতো গ্রেনেড সন্ত্রাস না করা, মৌল জঙ্গিবাদের দমন, দুর্নীতিতে এক নম্বর না হওয়া এবং উন্নয়নকামী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র নেতা যিনি স্থল, জল, অন্তরীক্ষ জয় করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান তরুণদের ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দিয়েছেন তিনি। তাই এখন বলতে হয়, এখন তাদের জন্য অন্য অনেকের বিকল্প আছে, বিকল্পেরও বিকল্প আছে, কিন্তু শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা থাকলে তরুণরা থাকবে, আমরা থাকব। তিনি কারো কাছে নেত্রী, কারো কাছে জননেত্রী, কারো কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কারো কারো দেশনেত্রী, আমাদের জেনারেশনের অনেকের কাছে শুধু আপা। এই একটি শব্দ মমতা, ভালোবাসা স্নেহের প্রতীক। আমরা তার বিরোধিতা করি, সমালোচনা করি, ক্ষুব্ধ হই কখনো। কিন্তু যেই আপা বলে কাছে দাঁড়াই অমনি মাথার ওপর রাখেন স্নিগ্ধ হাত। বাংলাদেশের আর কেউ এত অভিধায়, এত আপন অভিধায় সিক্ত হননি। আমি যদি কবি হতাম, তাহলে লিখতাম শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ প্রিয় বাংলাদেশ আর রোদেলা থাকবে না বহুদিন, নামবে ঘোর অমাবস্যা। শেখ হাসিনা না থাকলে কি আর বসন্তে ফুটবে ফুল? চরাচর হবে দীর্ণ, নদী হারাবে মরুপথে। আর শেখ হাসিনা থাকলে, সুভাষ মুখোপধ্যায়ের ভাষায় বলতে পারব ‘ফুল ফুটক না ফুটুক আজ বসন্ত’। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারব ‘এ ঘন ঘোর বরিষায়’ কৃষক বুনবে বীজ সবুজ ফসলের প্রত্যাশায়, নদী হবে কল্লোলিনী, ঢাকা হবে তিলোত্তমা, বাংলাদেশে তরুণরা শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করবে। চার্লস ডিকেন্স লিখেছিলেন, এখন বড় সুসময়, এখন বড় দুঃসময়। সুসময় তো বটে, এত সম্পদ তো বাংলাদেশে আগে দেখিনি কখনো। দুঃসময় এই যে, শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আগাছার মতো বেড়ে ওঠা কিছু মানুষ যা করছে তা ওই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতই শক্ত করছে, অনেকের আশা, বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা, শেখ হাসিনার স্বপ্ন নষ্ট করছে। কিন্তু এই দুঃসময় আগেও তিনি অতিক্রম করেছেন, এখনো করবেন, যে কারণে আমরা বলি শেখ হাসিনা শেখ হাসিনাই, দুঃসময়কে নিয়ে আসবেন সুসময়ে। এই জন্মদিনে বলব, শেখ হাসিনা ছিলেন, শেখ হাসিনা আছেন, শেখ হাসিনা থাকবেন [যতদিন ঈশ্বর ইচ্ছা করেন] যাতে ভবিষ্যতে আমরা খোলা গলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দরাজ গলায় বলতে পারি, জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় শেখ হাসিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App