×

সাময়িকী

দেশরত্ন থেকে বিশ্বের নন্দিত নেতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম

দেশরত্ন থেকে বিশ্বের নন্দিত নেতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত সংখ্যায় আমরা অন্য এক শেখ হাসিনাকে খুঁজে পাবো। আমরা খুঁজে পাবো তাঁর লেখকসত্তাকে। যদিও তাঁর লেখকসত্তায় একেবারে জন্মসূত্রে মিশে আছে রাজনীতি। আছে এই বাংলার ঘাস-ফুল নদী, মাটি ও মানুষের স্পর্শ। তাঁর কলম থেকে কালি ঝরে না। অবিরত ঝরে যায় অশ্রু, রক্ত আর স্বপ্ন। তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি ঘটনা অন্তর দিয়ে দেখা এবং মানবিক এক দৃষ্টিভঙ্গিতে তার বিশ্লেষণ। আমরা আশা করছি, ইতিহাসের পরম্পরার অংশ হিসেবেই তিনি নিশ্চয়ই নিজের জীবনের দুঃখ, আনন্দ, সংগ্রাম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা কথা নতুন প্রজন্মের জন্য আগামীতে লিখে যাবেন। প্রিয় লেখক ও সম্পাদক জন্মদিনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছি।

১৯৪৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখে যে শিশুটির জন্ম হলো পরবর্তী ইতিহাসে সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং বাঙালি জাতির ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে সে বিষয়টি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের দিকে তাকালে বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, শোষিতের গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের অভিমুখী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দ্রুত বিকাশ রুখে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও নতুন বাংলাদেশের দেশীয় শত্রুপক্ষ দানবীয় হিংস্রতায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হত্যা করে। বিদেশে অবস্থানের কারণে শুধু দুটি বোন বেঁচে যান। এই ভয়াবহ ট্র্যাজিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই শেখ হাসিনা যেন হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন আশার প্রতীক। মহান পিতার তিরোধানের পর তাঁরই জীবনব্যাপী ত্যাগ, তিতিক্ষা ও লক্ষ্যভেদী সংগ্রামে সৃষ্ট বাঙালির আধুনিক, গণতান্ত্রিক, মানবিক ও শোষণমুক্ত জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জীবনপণ সাধনা।

দুই. শেখ হাসিনা জানতেন দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মৃতিতে ধরে রেখেছে। এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটি যে ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্তদের হাতে পড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং পতিত হয়েছে দুঃশাসনের চক্রাবর্তে। সেই জায়গায় তাঁকেই রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সে জন্য স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। তিনি দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিলেন, কিন্তু তখন জেনারেল জিয়ার অবৈধ স্বৈরাচারী শাসন চলছে। তাদের কোপানলে পড়ে হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শুধু নিষেধাজ্ঞা জারি করা নয়, নানা কূটচক্রান্তে তাঁর জীবননাশের উপক্রমও করা হলো। এ অবস্থায় তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে ১৯৮১ সালে ৫ মে বিখ্যাত নিউজ উইক সাময়িকী এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে বলেছিলেন, প্রবল স্বৈরাচারী শাসকদের বিরোধিতার মুখে আপনার দেশে ফেরা কি ঝুঁকিপূর্ণ হবে না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘সাহসিকতা এবং ঝুঁকি এই দুই-ই জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিকল্পহীন শর্ত। প্রকৃতপক্ষে, জীবনে ঝুঁকি নিতে না পারলে এবং মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ তিনি জানতেন দেশে ফেরা এবং দেশকে নতুন করে বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল জাতিরাষ্ট্রে রূপ দেয়া সহজ হবে না। তবুও তাঁকেই তো এ কাজের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ তিনি যে সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ বাঙালির রক্তের উত্তরাধিকার বহন করছেন। তাঁকেই তো হতে হবে পিতার মতো সাহসী, দৃঢ় অঙ্গীকারদীপ্ত এবং লক্ষ্যভেদী নেতা। তিনি এ-ও জানতেন দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও ভালোবাসে। তিনি শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিতে পারলে গোটা দেশবাসী তাঁর পেছনে কাতারবন্দি হবে। সত্যিই হয়েছিল তাই। ১৯৮১ সালে ১৭ মে যখন তিনি দেশে ফিরে এলেন সে দিন ছিল ঝড় এবং প্রবল বৃষ্টিপাত। তবুও গোটা ঢাকা শহর বৃষ্টির ঢলে নয়, মানুষের ঢলে ভেসে উঠেছিল। সে দিন তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে এতদিনে দেশ পুরোপুরি পাকিস্তানের মতো স্বৈরসামরিক ও ধর্মপ্রবণ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। শেখ হাসিনা সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন এবং বাংলার মানুষকে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের ধারায় অভীষ্ট লক্ষ্যে ফিরিয়ে এনেছেন। এ তাঁর এক অনন্য গৌরবকথা। শেখ হাসিনা সুপরিকল্পিত ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে দেশে ফেরার আগে তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে সে সম্পর্কেও যথেষ্ট হোমওয়ার্ক যে করেছিলেন সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। এমনিতেই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি পুরোপুরি রাজনীতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি তাঁর কলেজে নির্বাচিত সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি নিজেও সে কথাটি বলেছেন এভাবে, ‘রাজনীতি আমার রক্তে মেশানো... জন্মের পর থেকে আমি কর্মচঞ্চল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ছিলাম... রাজনীতির জন্যই মা-বাবা, ভাই ও আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছি।’ অতএব, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের পর্যায়ক্রমিক উদ্যোগ যে গ্রহণ করবেন সেটাই ছিল স্বাভাবিক। প্রথম কর্তব্য হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগকে নতুন পরিস্থিতিতে যুগোপযোগী করে গঠন করার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং যথারীতি দলীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আর এক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল ভোটে সরকার গঠনের সুযোগ পায়। সেই থেকে তাঁর নেতৃত্বে যখনই বাংলাদেশে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখনই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুশাসন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করে যথোপযুক্ত শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন। এ বিষয়টি খুব সহজ ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহায়তাকারী শক্তি বিপুল জনসমর্থনে তাঁর সরকারের পক্ষে এ অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়। যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যাকারী ধর্মান্ধ জঙ্গিদের বিচারের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মৌল সত্তায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনার।

তিন. দেশে এখন যে আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দ্রুত ও ঈর্ষণীয় অগ্রগতির ধারা সৃষ্টি হয়েছে তার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাঁর সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কেই শুধু স্থিত হয়নি, সাম্প্রতিক তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের এক বিস্ময়কর নজিরও সৃষ্টি করেছে। এ জন্য বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্প্রতি আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু যেমন ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে, শিশু মৃত্যুর হার সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে, তেমনি মাথাপিছু বার্ষিক আয়ও ১৯০৯ ডলারে পৌঁছেছে। ফলে আমাদের দেশটি এতদিন নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর উন্নয়নের ফলে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনন্দিত নেতৃত্বের আসনেও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। সে জন্যই বিশ্বে যে কোনো উচ্চ পর্যায়ে সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সমাবেশে তাঁর উপস্থিতিও অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য এক অসামান্য অর্জন। তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ ও দেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক জাগরণের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে বিপুল বাজেট বরাদ্দ দিয়ে আসছেন তার ফলে নিচের দিক থেকেই এক সামগ্রিক সামাজিক অগ্রগতির সূচনা হয়েছে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাঁর সাহসী সিদ্ধান্ত এবং সুচিন্তিত কর্মপন্থা বাংলাদেশের অগ্রগতিকে এক শ্লাঘনীয় উচ্চতায় স্থাপন করেছে। জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ সাহসী সিদ্ধান্তে বিশ্ব পরাশক্তি বা বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তির দম্ভকে উপেক্ষা করে থাকেন। শেখ হাসিনাও সেই রকম দার্ঢ্যইে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের টালবাহানা ও ছলছুতোকে প্রত্যাখ্যান করে নিজ শক্তিতেই পদ্মা সেতু নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ সেতু চালু হবে। এই সেতু চালু হলে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আর এক ধাপ উল্লম্ফন ঘটবে। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রেও এক নববিপ্লবের সূচনা হয়েছে। ফলে মঙ্গাকবলিত রংপুর-দিনাজপুর-কুড়িগ্রাম অঞ্চলসহ গোটা দেশ এখন কৃষিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং নানা রকম প্রণোদনার ফলে এক্ষেত্রে এই উজ্জ্বল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি, গণযোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্ট নানা ক্ষেত্র ও উপক্ষেত্রেও অগ্রগতির নবধারা সূচিত হয়েছে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেছিলেন। এক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতিই শুধু হয়নি, প্রকৃত প্রস্তাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধির হার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এক নব ইতিহাস সৃষ্টি করে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা এখন বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সংস্কৃতির অধিকারী হিসেবে নবকৌলিন্য লাভ করেছি। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা আমাদের সমুদ্রসীমার অধিকার আইনগতভাবেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত দিকে এত অর্জন বিশ্বের আর কোনো দেশই করতে সক্ষম হয়নি। শেখ হাসিনার অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টির জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়।

চার. মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ এবং জাতিগত বিলুপ্তির মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নথিপত্রে এদের সংখ্যা ১০ লাখ বলা হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এক বিরাট চাপের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের জটিল সমস্যাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি ও ইকোলজিক্যাল বিপর্যয় ঘটছে। এই সবকিছু জেনেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু মানবিক কারণে এই বিপুলসংখ্যক অসহায় মানবগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এ তাঁর মহানুভবতা এবং অসহায় মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারই নিদর্শন। কারণ তিনি জানেন মানুষ, মানুষেরই জন্যে। গোটা ইউরোপের দেশে দেশে বহু দেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ, কিন্তু শেখ হাসিনা উদার হৃদয় নিয়েই নির্যাতিত, নিপীড়িত, অপমাণিত মানুষকে মৃত্যু ও দুঃসহ যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাতে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এই মহানুভবতার জন্য বিশ্বে তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে নন্দিত হয়েছেন এবং তাঁর মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এখন প্রকট রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশের জন্য এ বোঝা বহন দুঃসাধ্য। তাদের অবস্থানে প্রকৃতি ও পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অপূরণীয়। অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জরুরি। শেখ হাসিনা আগে প্রস্তাব দিয়েছেন মিয়ানমারের রাখাইন বা আকিয়াবে সেভ জোন (ংধাব ুড়হব) করে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা প্রদান করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো বর্তমান অবস্থায় বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হতে পারে। যাহোক, এ বছর জাতিসংঘে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার পর বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনকে নিয়ে যে ত্রিপক্ষীয় কমিটি হয়েছে তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি।

পাঁচ. দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার তুলনীয় আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জনকারী আর কোনো নেতার সাক্ষাৎই আমরা পাইনি। ১৯৯৭ সাল থেকে শেখ হাসিনা তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এবং বহুমুখী অর্জনের জন্য এ পর্যন্ত ৩২/৩৩টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন। এর মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শতবর্ষী দূরদর্শী বদ্বীপ (উবষঃধ চষধহ) পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ পুরস্কার, সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার জন্য বিশেষ জাতিসংঘ পুরস্কার, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার, বিপন্ন ও স্বদেশ থেকে বিতাড়িত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের জন্য মাদার অব হিউম্যানিটি পুরস্কার। এ ছাড়াও তিনি রাজনীতিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য উইমেন ইন পার্লামেন্ট গ্লোবাল এওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো শান্তি বৃক্ষ পদকে ভূষিত হন। ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য লাভ করেন জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন এবং গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ এওয়ার্ড। তাঁর এ ধরনের পুরস্কার প্রাপ্তির সংখ্যাটি দীর্ঘ। তাই আমরা গোটা তালিকা উদ্ধৃত করছি না। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উন্নয়নের দর্শন সম্পর্কে বলেছেন, ‘রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে... রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা হবে অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে। সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে... কে কত ভালো কর্মসূচি দিতে পারে। কোন দলের কর্মসূচি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে বেশি ফলপ্রসূ জনগণ তা বিচার করার সুযোগ পাবে। আন্দোলন হবে সমাজ সংস্কারের জন্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। আর এ উন্নয়ন মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়। উন্নয়ন হতে হবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য এবং রাজনীতি হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সামাজিক অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি।’ সবশেষে দুর্নীতিবিরোধী যে নজিরবিহীন অভিযান তার নিজ দলের মধ্যে চালিয়েছেন এবং নদী দখল ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যে অভিযান চলমান আছে তা যদি সরকার সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে এবং দখলদাররা আবার ফিরে না আসতে পারে এবং দলের লুটেরারা শাস্তি পায় এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের সকল স্তরে দুর্নীতির যে মহামারি এবং নানা প্রকল্পের অর্থ লুটপাট-বালিশ কাণ্ড, পর্দা কাণ্ড এবং পুকুর খনন প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ যাত্রার লুটেরারা শাস্তি পায় তবেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে। একমাত্র শেখ হাসিনাই এটা পারেন। দলের এবং অঙ্গ সংগঠনের যারা বঙ্গবন্ধুর নামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং প্রধানমন্ত্রীর চাটুকারিতা করে গোপনে টাকার পাহাড় গড়ায় মত্ত তাদের নির্মূল করতে হবেই। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষিতের গণতন্ত্র এবং সোনার বাংলা। জন্মদিনে বিশ্বে এশিয়ার গৌরব ছড়ানো বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে স্বীকৃতি লাভকারী বাঙালির গৌরব শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন, শুভ কামনা ও শ্রদ্ধা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App