×

জাতীয়

গান্ধীজী ও বঙ্গবন্ধু দুজনই ছিলেন মহামানব: কৃষিমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫১ পিএম

গান্ধীজী ও বঙ্গবন্ধু দুজনই ছিলেন মহামানব: কৃষিমন্ত্রী

পৃথিবীজুড়ে মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা অহিংস মতবাদে বিশ্বাসী মহাত্মা গান্ধী। অন্যদিকে বাঙালির অধিকার রক্ষায় নেতৃত্ব দানকারী জাতির পিতা অহিংসপ্রাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট আয়োজিত এ আলোচনানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ ও সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ। মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা করেন ইতিহাসবিদ প্রফেসর মুনতাসীর মামুন ও বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গান্ধী আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাংবাদিক স্বদেশ রায়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গান্ধীজী ও বঙ্গবন্ধু দুজনই ছিলেন মহামানব। মহৎ আত্মা হিসেবে সারা ভারতের মানুষ গান্ধীজীকে মহাত্মা উপাধী দিয়েছে। এখনও সেখানের মানুষ তাকে বাপুজী বলে সম্মোধন করে। অতি সাধারন জীবন-যাপনের মধ্যদিয়ে তিনি চলতেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যারিষ্টারী করতে যান। তিনি বর্ণবৈশম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। তিনি অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে তার ৭ মার্চের ভাষণ। গান্ধীজীরও ছিল একই কথা, যারা যারা তোমার রক্ত নিতে চায় যার কাছে অস্ত্র আছে তাকে তুমি হত্যা করবে না। তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত হও তোমার দেশপ্রেমে তার কাছে জীবন দিতে। মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন আন্দোলন শুরু করেছিলেন তখন তার বয়স ৩০ বছর হয়নি। এই ৪৮ থেকে ৭১ পর্যন্ত যতগুলি গোয়েন্দা রিপোর্ট তারমধ্যে বঙ্গবন্ধুর উপর ৪০ এর উপরে পাই। সেই তরুনকে তখনের পাকিস্তান সরকার প্রধান শত্রু রূপে গন্য করেছিল। প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি রিপোর্টে শেখ মুজিবুর রহমান কি করছেন তার উপর রিপোর্ট। এত রিপোর্ট কিন্তু তার সমসাময়িক যারা সিনিয়ার তাদের উপর নেই। অন্যদিকে গান্ধীজী জীবনের একটি অংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুও জেলে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে প্রথম নেহেরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিভাবে স্বাধীন করা যায় দেশকে। তখন ভারত মানেই হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধান শত্রু। সেই সময়ে একজন ভারতের সাহায্য চাইছেন এই উপলব্ধী কিন্তু অনেকেই করতে পারেনি। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রথম আশ্বাস দেন যে যদি এরকম কোন পরিস্থিতি হয় তাহলে তারা সাহায্য করবেন। বঙ্গবন্ধুর ১৯৫৯ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারপর ৭১ পর্যন্ত তিনি পরিকল্পনা মাফিক কাজটা করেছেন। সুভাষ বসু যেমন স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশ শক্তির সাহায্য চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুও চেয়েছেন কিন্তু তিনি যখন আন্দোলনটা করেন তখন তিনি গান্ধীর স্টেটিভটি বেছে নিয়েছেন যাতে কখনও তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা না যায়। অসহযোগ আন্দোলন যখন বাংলাদেশে শুরু হয়, পরপর দুদিন হরতাল আহ্বান করেন এবং ৭ মার্চ জানান যে কি হবে। মার্চের ২ তারিখে ফরমালি শুরু হয়েছে অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন করতে হবে এবং শতর্ক থাকতে হবে যেন কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হয়। আমরা দেখেছি ১৯৪৬ সালে গান্ধীজী নোয়াখালীতে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের একটা বিকল্প তিনি ভেবেছিলেন যেটা গান্ধীজী ভাবেননি। আমাদের এখানে যে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে এতে সবার জন্য একটা স্পেস দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলন তার প্রমাণ। এ কারনে এই স্বাধীনতা নিয়ে কোন দেশ প্রশ্ন তোলেনি। বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা ৭ মার্চে তার ডাকে সবাই আত্মত্যাগে প্রস্তুত ছিল। তবে মহাত্মা গান্ধীকে মানুষ মনে রাখে কারণ তিনি অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকে একটা রাজনৈতিক প্রত্যয় হিসেবে নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব তিনি এই প্রত্যয়টাকে নতুনভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। মুনতাসীর মামুন বলেন, আমরা মহাত্মা গান্ধীকে এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক মনেকরি। পৃথিবীজুড়ে দক্ষিণ পন্থার যে উত্থান দেখছি তাতে সংস্কৃতি সভ্যতা বিপন্ন। অতি ধর্ম, অতি জাতীয়তাবাদ সব জাতির জন্য ক্ষতিকর। যেভাবে ধর্মকে প্রয়োগ করা হচ্ছে এটা কোন মানব মুক্তির পথ নয়। গান্ধীজী ধার্মিক হওয়া সত্বেও তিনি কখনও সাম্প্রদায়িকতার দিকে নজর দেন নি। বঙ্গবন্ধুও কখনও ধর্মকে রাজনৈতিক প্রত্যয় হিসেবে ব্যবহার করেন নি। ধর্ম নিয়ে খেলাটা আগুন নিয়ে খেলার সমান। এক সময়ে নিজের হাতই পুড়ে যেতে পারে। মহাত্মাগান্ধীর নীতিকে আজও খুবই প্রাসঙ্গিক মনে করি অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তাই। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে গণতন্ত্র নিরস্ত্রের হাতে থাকবে। নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দুই দেশের জাতির পিতা দুই মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহাত্মা গান্ধী। এ দুই জনের রাজনৈতিক আদর্শে যথেষ্ট মিল রয়েছে। দুজনই দেশপ্রেমে আপ্লুত ছিলেন। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এদুজন ছিলেন আপোষহীন নেতা। লক্ষে পৌঁছাবার জন্য ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রীভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, আমরা দুই হাজার ১৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর একশ পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদ্যাপন শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পরে আগামী ২ অক্টোবর এটার সমাপ্তি হবে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আমরা বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে শান্তি ও অহিংসার দূত গান্ধীজীর জীবন ও আদর্শ স্মরণ করেছি। প্রকৃতির সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের যে শিক্ষা গান্ধীজী দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অন্যান্য নেতারা যৌথভাবে ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে একটা গান্ধী স্পা এবং সোলার প্যানেল উদ্বোধন করেছেন। এটি নিউইয়র্কের হেড কোয়ার্টারের উপরে লাগানো হয়েছে। উন্নয়নের পথে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে তরুনদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনের মধ্যে ধারন করতে হবে। যেন তারা একটি মাল্টি কালচারাল বাংলাদেশ তৈরিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে পারে। এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো এসব মহান মানুষদের অবদান স্মরণ করিয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। সভাপতির বক্তব্যে স্বদেশ রায় বলেন, আমরা চাই এই ট্রাস্ট বর্তমানের হানাহানির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বে যেন কথা বলতে পারে। আমরা জানাতে চাই গান্ধীর আদর্শ কি ছিল এবং আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কি ছিল। আমি তরুণ সমাজকে বলব আগামী দিনে বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীর আদর্শকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে এগিয়ে যেতে পারি সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App