×

পুরনো খবর

জি কে শামীমের কবজায় থাকা প্রকল্পের কী হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:৪২ এএম

‘টেন্ডার কিং’ এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম র‌্যাব-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর সরকারি বড় নির্মাণ কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি এন্ড কোম্পানি সরকারের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করছে। গত তিন দিন ধরে ‘খোরাকি’ না পেয়ে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে ওই প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। তবে সরকার বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবে ৩০০ কোটি টাকা থাকলেও জি কে শামীম, তার স্ত্রী ও মা-বাবার নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারার কারণেই শ্রমিকদের টাকা দিতে না পারায় জি কে শামীমের সব সাইটের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে জিকেবি এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক (ক্রয়) মো. মাসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, গত তিন দিন ধরে শ্রমিকদের খোরাকির টাকা না দেয়ায় আজ (সোমবার) দুপুর থেকে সবকটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কবে এই কাজগুলো ফের চালু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ভোরের কাগজকে বলেন, নির্মাণকাজগুলো যাতে ঠিকভাবে চলতে পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হবে। তবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারার অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ রেখে সরকারকে চাপেও রাখতে পারে এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি। এমনটি যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জিকেবি এন্ড কোম্পানির বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক আমির হামজা জানান, শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ১৭টি সরকারি প্রকল্পের কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাবের সদর দপ্তর, গাজীপুরের পোড়াবাড়িতে র‌্যাব ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব ভবন, পঙ্গু হাসপাতাল, এনজিও ভবন, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন, বিজ্ঞান জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ক্যাবিনেট ভবন, বাসাবো বৌদ্ধমন্দির, হিলটেক্স ভবন, মিরপুর ৬ নম্বরের স্টাফ কোয়ার্টার, সেবা মহাবিদ্যালয় এবং মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জি কে শামীম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক থাকায় প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ এখন চলমান থাকবে কিনা এ নিয়ে বড় রকমের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে তাতে গতকাল সোমবার কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। একইভাবে ক্যাবিনেট ভবন নির্মাণের জন্য এতদিন শ্রমিকদের পাইলিং করতে দেখা গেছে। কিন্তু গতকাল সেখানেও কোনো শ্রমিক কাজে ছিলেন না। জানতে চাইলে শামীমের ব্যক্তিগত সহকারী দিদারুল ইসলাম বলেন, চলমান বিভিন্ন নির্মাণকাজে প্রতিদিনই শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এই অঙ্ক অনেক বড়। শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও শ্রমিকদের দেয়ার জন্য টাকা তুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা আর আমাদের হাতে নেই। একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক (ক্রয়) মো. মাসুদ জানান, এই মুহূর্তে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক আমাদের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করছে। আর প্রায় দেড়শ অফিস স্টাফ রয়েছে। প্রতিদিন এত লোকের খোরাকি ও বেতন দিতে, প্রজেক্টের জিনিসপত্র কিনতে নগদ টাকার প্রয়োজন হয়। এতে প্রতিদিনই কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকেও টাকা তুলতে না পারায় সব কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন কি হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা শুনছে না। আপনারা কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যারের (শামীম) নিমক খেয়েছি। এখন স্যার জেলে, নিমক হারামি করতে পারব না। যতদিন পারব, ততদিন সাইটে থাকা স্যারের জিনিসপত্রগুলো পাহারা দিয়ে রাখব। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো ব্যক্তিকে এই ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজের টেন্ডার দেয়া হয়নি। একটি বিধিবদ্ধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে এসব ভবন নির্মাণ কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। জি কে শামীমকে গ্রেপ্তারের ফলে ওই কোম্পানির নির্মাণাধীন কাজ শেষ করতে পারবে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনবোধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, জিকেবি এন্ড কোম্পানির মালিক জি কে শামীম গত শুক্রবার তার ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। অস্ত্র ও মাদক মামলায় জি কে শামীম এখন ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App