×

মুক্তচিন্তা

জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য ও আরো করণীয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঠোর অবস্থানের মধ্যেও জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। জঙ্গিরা নানাভাবে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আশার কথা, জঙ্গিদের অঘটন পরিকল্পনা আগেই নস্যাৎ করা যাচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বড় সাফল্য। গত সোমবার জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একতলা একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। দিনভর অভিযানে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীনের বড় ছেলে ফরিদ উদ্দিন রুমিসহ (২৭) তিনজনকে আটক করেছে। তবে বাড়ির মালিকের ছোট ছেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জামাল উদ্দিন রফিক (২৫) পলাতক। পুলিশ বলছে, রফিক বর্তমানে নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা। নব্য জেএমবির সদস্যরা ওই বাড়িটিতে আস্তানা গেড়েছিল। এখানেই কথিত আইএসের নামে বাংলায় ধারাভাষ্য সংবলিত ভিডিও ধারণ করে সম্প্রতি সেটি অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে। এখানে তারা অত্যাধুনিক বিস্ফোরক ল্যাবও গড়ে তুলেছিল। কয়েক মাস ধরে ঢাকায় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে নিক্ষেপিত বোমাগুলো এ বাড়িতেই তৈরি করা হয় বলে পুলিশ ধারণা করছে। এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার আস্তানায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হয়েছিল নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে হলি আর্টিসান হামলা একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা বলে মনে করি। এ ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম যে, জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি কেবল দরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মাদ্রাসাপড়ুয়াদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের অত্যন্ত উঁচু মহলে, উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষিত ছাত্র ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রীদের মাঝেও। তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ইন্ধনদাতা হিসেবে বেশকিছু শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের ভূমিকার কথাও আমরা জানতে পেরেছি। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। বলা যায় দেশে জঙ্গি তৎপরতা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগাম তথ্য নিয়ে বেশকিছু জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে। এই তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গি ধরপাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে নতুন করে জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার ধারাও। পাশাপাশি জঙ্গি দমন অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় নব্য জেএমবি বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতা কীভাবে ও কিসের জোরে চলতে পারছে, তা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করা দরকার। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন কখনোই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তাদের জনবল সংকটও কখনো স্থায়ী হয়নি। আমরা মনে করি, জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ হলে এদের তৎপরতাও কমে যাবে। জঙ্গিদের যে অর্থ তা খুব একটা দেশের বাইরে থেকে আসে না। অভ্যন্তরীণ লেনদেনের মাধ্যমেই জঙ্গিদের হাতে অর্থ যায়। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App