‘সব আমলেই কমন ব্রাত্য ওসি সাহেবরা’
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৩ পিএম
চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত ৫ বছরে সরকার দলীয় এক সাংসদের ১৮০ কোটি টাকা আয়ের তথ্য নিয়ে একজন পুলিশ পরিদর্শকের একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পোষ্টে নিজ বাহিনী সহ রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কর্মকাণ্ডের চালচিত্র তুলে ধরেন তিনি।
গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরীর এই পথে বিপুল পরিমান আয়ের তথ্য জানিয়ে নিজ ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেন এক সময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত সাইফ আমিন নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত। ফেসবুকে তিনি যা লিখেছেন তা হুবুহু তুলে ধরা হল:
ক্লাব - জুয়া - সাংসদ এবং ওসি
ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।
মহানগরের ফ্লাট কেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লার গুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইন্কাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।
এরপর ডিবি। ডিবি কালেকটিভ নেয়না, লিষ্ট অনুযায়ী ইন্ডিভিজুয়াল কালেকশন্। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজ গুলোতে পাঠানো হয়।
বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয়না।
মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লক্ষ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোষ্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস।
ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলন্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন।
চ্ট্রগ্রামে শামসুল হক মাস্টার(!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্রগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোডের মালিক, তত্তাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিমন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত ( তথাকথিত যুবলীগ নেতা)। টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ঐ থানায় ১৩০০ টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখাতে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রা করেন না।
এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো। এবং র্যাব এর এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চ্ট্রগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা স্বত্তেও যা বন্ধ করতে পারেন নি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহাঃ সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌঃ। অথচ হক মাস্টার ধোঁয়া তুলশী রয়ে গেলেন।
জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্হা। আগের সরকারে করেছেম খোকা, আব্বাস, ফালু এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব।