×

জাতীয়

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ ৯ বছর ধরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০১ এএম

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ ৯ বছর ধরে
বিগত ৮-৯ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এসব হাসপাতালগুলোতে মাত্র ৬-৭ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কর্মরত আছেন, ৫০ হাজারেরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অপ্রতুলতায় বিভিন্ন রিপোর্ট পেতে যেমন বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের, তেমনি বেসরকারি ভুঁইফোঁড় বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে গিয়ে প্রতারণাসহ ভুল রিপোর্টের শঙ্কায় ভুগছেন রোগীরা। ভুল রিপোর্টের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। রোগীদের অভিযোগ এক একটি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে একেক রকম রিপোর্ট বা ফলাফল পাওয়া যায়, যাতে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা তো আছেই, তার ওপর গলাকাটা চার্জে জর্জরিত বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৮৬০টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ১২৫টি, উপজেলা হাসপাতাল ৪২৫টি এবং বাকিগুলো ইউনিয়ন পরিষদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ ছাড়া দেশে রয়েছে প্রায় ৩ হাজারের মতো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক। এ ছাড়া সারাদেশে ভুঁইফোঁড়ের মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগে ৩ শিফটে প্রয়োজন প্রায় ৩ থেকে ৪০০ টেকনোলজিস্ট, কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ১০০ জন। ঢাকা মেডিকেলের অবস্থাও প্রায় একই রকম। সেখানে মাত্র ৪০ শতাংশ মেডিকেল টেকনোলজিন্ট দিয়ে জোড়াতালি করে কাজ চালান হচ্ছে। এদিকে সারাদেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোর অধিকাংশেই কোনো টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়নি। সেখানে যন্ত্রপাতি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে (২৫০ বেডের) ২-৫ জন করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কর্মরত আছেন, আবার কোথাও কোথাও ১-২ জন টেকনোলজিস্ট আছে। যার ফলে অনেক সময় স্বাস্থ্য সেবার সুফল রোগীরা না পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, দেশের ৫৫০টি সরকারি হাসপাতালে ৬ থেকে ৭ হাজার টেকনোলজিস্ট কর্মরত রয়েছে, আর পদ শূন্য আছে প্রায় ৫০ হাজারের মতো। অর্থাৎ মাত্র ৭ শতাংশ টেকনোলজিস্ট দিয়ে কাজ চলছে সরকারি হাসপাতালগুলোর বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি ও ফিজিওলজি, স্যানেটারি ইন্সপেক্টরসহ নানাবিধ মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশনের (বিএমটিএ) সভাপতি আলমাস আলী খান। গত বৃহস্পতিবার তিনি জানান, ২০১১ সাল থেকে দেশের কোনো হাসপাতালে আর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হয়নি। তখন কর্মরত ছিলেন মাত্র ৬-৭ হাজারকর্মী। এর পরে অনেকে অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়েছেন, সে হিসেবে বর্তমানে আরো অনেক কম সংখ্যক টেকনোলজিস্ট দিয়ে দেশের ৫৫০টি সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। এতে রোগীরা সবাই উপযুক্ত সেবা পাচ্ছেন না, আবার অনেক ক্ষেত্রে সঠিক মানের রিপোর্টও পাচ্ছেন না তারা। তিনি জানান, ঢাকার বড় বড় কয়েকটি মেডিকেল কলেজে বা হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় কম টেকনোলজিস্ট থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মেডিকেল টেকনিশিয়ান নেই বললেই চলে। বর্তমানে সরকার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা মেশিন দিলেও সেখানে মেডিকেল টেকনিশিয়ান না থাকায় এসব বন্ধ হয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর অযোগ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টের শিকার হচ্ছে রোগীরা। এর ফলে ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেকে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধের কারণ সম্পর্কে বিএমটিএ সভাপতি আলমাস আলী খান জানান, পাকিস্তান আমল থেকে স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টির অধীনে সরকারি ৮টাসহ প্রায় ৮৮টি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল টেকনোলজির ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু আছে। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বের হয়। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে শিক্ষা বিভাগের অধীনে কারিগরি ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। কারিগরি কোর্সের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে যে কাউকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সার্টিফিকেট দেয়া হয়। কিন্তু এরা কোনোভাবেই যোগ্য নয়। কিন্তু হাইকোর্টের এক নির্দেশে ২০১৩ সালে সর্বশেষ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পরীক্ষায় স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি এবং কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা সবাইকে পরীক্ষা দেবার সুযোগ দেয় সরকার। তখন স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়োগ বন্ধের জন্য আবেদন জানালে সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে শুধু স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাশ করা টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন। যার ফলে সব নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালের মধ্যে সরকারকে এ বিষয়ে একটি আইন করার নির্দেশনা দেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার টেকনোলজিস্টের সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানান, সরকার বিভিন্ন হাসপাতালে ইতোমধ্যে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিয়েছে। ক্রমান্বয়ে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের ব্যবস্থাও হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আইনি জটিলতার শিগগিরই অবসান হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App