×

জাতীয়

১০ লাখ মোটরসাইকেলের চাপে নাকাল রাজধানীর রাজপথ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৫ এএম

১০ লাখ মোটরসাইকেলের চাপে নাকাল রাজধানীর রাজপথ
রাজধানীর ব্যস্ততম সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সিগন্যাল। ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলামোটরের দিক থেকে ফার্মগেটের দিকে অগ্রসর হওয়া সব যানবাহন থেমে গেল। কিন্তু সড়কের বাম পাশ থেকে একের পর এক মোটরসাইকেল এসে ওই সব যানবাহনের সামনে এসে দাঁড়াতে শুরু করে। এক মিনিটের মধ্যেই ৬০ থেকে ৭০টি মোটরসাইকেল সেখানে এলোমেলোভাবে অবস্থান নেয়। এ সময়ের মধ্যেই ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল সিগন্যাল অমান্য করে ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই অগ্রসর হয়। ফলে মোটরসাইকেলের বাধা পেয়ে পান্থপথের দিকে যাওয়া যানবাহনগুলোর গতি কমে যায়। একটি সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কাও লাগে। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত রোববার রাত ৮টার দিকে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে এ প্রতিবেদকের। এ ধরনের দৃশ্য রাজধানীর প্রতিটি সড়কের সিগন্যালে প্রতি মুহূর্তেই দেখা যায়। বাস-মিনিবাস, প্রাইভেটকার, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি অটোর পর মোটরসাইকেল এখন সড়কে শৃঙ্খলা নষ্ট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোটরসাইকেলের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। যে সময়ে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই মোটরসাইকেল নতুন ঝামেলার সৃষ্টি করছে। মোটরসাইকেল এখন সড়কে ঝুঁকির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বছর দুই আগেও সড়কে এমন দৃশ্য ছিল না। পুলিশ ও পথচারীরা অভিযোগ করেন, রাইড শেয়ারিং সেবা চালুর পর মোটরসাইকেল এখন রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলার অপর নাম। রাইড শেয়ারিং সেবা চালুর অল্প সময়ের মধ্যেই অতিরিক্ত প্রায় ৩ লাখ মোটরসাইকেলে রাজধানীর সড়কগুলো সয়লাব হয়ে যায়। এ ছাড়া ৭ লাখ বৈধ রেজিস্ট্রেশনধারী মোটরসাইকেল তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে ১০ লাখ মোটরসাইকেলে রাজধানীর সড়কের এখন নাকাল অবস্থা। গত ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পুলিশ বিভাগের দেয়া তথ্য থেকে জানান, ‘গত ৫ বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ হাজার ৫৪ জন নিহত হয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্তবে সরকারি এই পরিসংখ্যানের চেয়ে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি। আহতের সংখ্যা নিহতের সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি। হতাহতের এই সংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং সেবা চালুর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে। যেসব চালক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেছে তাদের রাজধানীর সড়ক সম্পর্কে ধারণা নেই। আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। মফস্বল এলাকার মতোই বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। তারা দক্ষ চালক না। মফস্বলের চা-পান-সিগারেটের দোকানদার, রিকশা চালক, ভ্যান চালকরা এনজিও বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মোটরসাইকেল কিনে ঢাকায় চলে এসে রাস্তায় নেমেছে। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং সেবা চালুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বেকার লোকজন উপার্জনের আশায় মোটরসাইকেল নিয়ে রাজধানীর রাস্তায় এসে নেমেছে। এটাই রাজধানীতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। গত ৩-৪ বছর ধরে বিআরটিএ থেকে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নেয়ার আবেদন দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে রাজধানীতেই ৭ লাখ বৈধ মোটরসাইকেল চলাচল করছে। ২০১৪ সালেও বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজারের বেশি সংখ্যক মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএতে আসতো না। ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএতে আবেদন বাড়তে শুরু করে। ২০১৬ সালে প্রায় ৫০ হাজার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ৭৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের এই সময় পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক সার্জেন্ট মকবুল হোসেন জানান, রাজধানীর সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি সিগন্যালেই মোটরসাইকেল চালকরা বেপরোয়া। সিগন্যাল অমান্য করে চলে যায়। দুর্ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় ভিআইপি প্রটোকলও মানে না। তা ছাড়া রাস্তার মোড়ে ও বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানবাহন চলাচলেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল ইসলাম জানান, ঢাকায় যে হারে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। চালকরাও দক্ষ না। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। কোনো নীতিমালা না করেই রাইড শেয়ারিং সেবার অনুমতি দেয়ায় সড়কে কিছুটা হলেও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ, পরিবহন ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালুর পর নতুন নতুন মোটরসাইকেল চালক রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগেরই কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। আচরণবিধিও জানা নেই। অ্যাপ কোম্পানিগুলোও কোনো ধরনের ট্রেনিং দেয়নি। এ কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। এখনই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরো বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App