×

মুক্তচিন্তা

শুধু প্রকল্প গ্রহণ নয় বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২০ পিএম

ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। তবে আশ্চর্যের খবর হলো, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। বুড়িগঙ্গার ৬৭টি বড় দূষণমুখের মধ্যে ৫৬টি ঢাকা ওয়াসার। আর তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা দূষণেও শিল্পকারখানার চেয়ে পিছিয়ে নেই বিসিক, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। বিআইডব্লিউটিএ সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে। নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনাকে অনেকাংশেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানী ঢাকার চারপাশে শুধু নয়, সারাদেশেই চলছে আগ্রাসী থাবায় নদ-নদী দখলবাজির দুর্বৃত্তপনা। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা এমনই যে, অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদ-নদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে যা ৪ হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। এই চিত্র বদ্বীপটির কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। এমন বাস্তবতায় গতকাল বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়েছে। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার তাগিদ প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হচ্ছে। পরিবেশ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা বলছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। সংকট কোথায়? দখল-দূষণকারীরা কি এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায়। নাকি সরকারের এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। অভাব রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ়তায় ও সদিচ্ছায়। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই তা আবার থেমেও যায়। সম্প্রতি ঢাকার চারদিকের নদ-নদীর দখলদার উচ্ছেদে কয়েক হাজার স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী রক্ষায়ও উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির অভাবে অবমুক্ত স্থানে আবার গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা। এখানে শৈথিল্যের কোনো সুযোগ নেই। যারা নদ-নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত তারা হয়তো নানাভাবে শক্তিশালী, ক্ষমতা-ঘনিষ্ঠও। তাদের আমল দিলে চলবে না। নদ-নদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যে মানুষদের উদ্দেশ্য করে প্রকল্প নেয়া হয় তাদের স্বার্থ আসলেই সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। নদী রক্ষায় নীতি ও আইন রয়েছে। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। নদীকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App