×

বিনোদন

সুন্দরীতমা তুমি...

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৫৬ পিএম

সুন্দরীতমা তুমি...
জেসিয়া ইসলাম ও জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর পর এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র খোঁজে চলছে অডিশন। এখান থেকে নির্বাচিত দেশ সেরা প্রতিযোগী মিস ওয়ার্ল্ডের আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অবিবাহিত ১৮-২৭ বছর বয়সী প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন, যারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’ বিজয়ী অক্টোবরে গালা ইভেন্টের মাধ্যমে সরাসরি লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ এর মূল মঞ্চে উপস্থিত হবেন। আগামী ১৪ ডিসেম্বর হবে চূূড়ান্ত পর্ব। এ দিন বিজয়ীর মাথায় স্বপ্নের মুকুট পরিয়ে দেবেন গতবারের বিজয়ী ভেনেসা পোন্স দে লিওন। ৬৯টি দেশ মিস ওয়ার্ল্ডের জন্য তাদের প্রতিনিধি চূড়ান্ত করেছে। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র তৃতীয় আসরে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন অভিনয়শিল্পী ফেরদৌস ও মৌসুমী এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম। প্রতিযোগিতার আদ্যোপান্ত নিয়ে সাজানো হলো মেলার এই প্রতিবেদন। গ্রন্থনা- শ্রাবণী হালদার
মিস ওয়ার্ল্ডের ইতিহাস মিস ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ও প্রধান আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যুক্তরাজ্যের এরিক মোর্লে ১৯৫১ সালে এই প্রতিযোগিতাটির গোড়াপত্তন করেন। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০০ সালে এরিকের মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী জুলিয়া মোর্লে প্রতিযোগিতার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এটির প্রতিপক্ষ হিসেবে মিস ইউনিভার্স এবং ‘মিস আর্থ’ সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। তবে মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতাটিই বর্তমান বিশ্বে সৌন্দর্যপ্রিয় জনগোষ্ঠীর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ও প্রচলিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা। মোর্লের কাছ থেকে ২০১৭ সালে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশি ফ্রাঞ্চাইজি নেয় অন্তর শোবিজ। তাদের সহআয়োজক হিসেবে আছে অমিকন এন্টারটেইনমেন্ট। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় আছে এক্সপোজার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে চীনের সানাইয়া শহরে বসে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’র আসর। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’ বিজয়ী এ বছর অক্টোবরে গালা ইভেন্টের মাধ্যমে সরাসরি লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ এর মূল মঞ্চে অংশগ্রহণ করবেন। ২০২০ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’র ৭০তম আসর বসবে থাইল্যান্ডে। সুন্দরীদের তালিকা এবার তৃতীয়বারের মতো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে। প্রথমবার মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছিলেন জেসিয়া ইসলাম ও দ্বিতীয়বার মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। এবার খুঁজে বের করা হবে নতুন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন আনিকা তাহের। এরপর ইয়াসমিন বিলকিস সাথী (১৯৯৫), রেহনুমা দিলরুবা চিত্রা (১৯৯৬), শায়লা সিমি (১৯৯৮), তানিয়া রহমান তন্বী (১৯৯৯), সোনিয়া গাজী (২০০০) ও তাবাসসুম ফেরদৌস শাওন (২০০১) বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন। বিচারকের আসনে যারা ২০১৭ সালে বাংলাদেশের আসরে গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিচারক হিসেবে ছিলেন অভিনেত্রী শম্পা রেজা, আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ও সাবেক মডেল বিবি রাসেল। গত পর্বের বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী শুভ্রদেব, অভিনেত্রী তারিন, মডেল ও অভিনেতা খালেদ হোসেন সুজন, মডেল শাবনাজ সাদিয়া ইমি ও ব্যারিস্টার ফারাবী। আইকন বিচারক হিসেবে ছিলেন মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ ও কোরিওগ্রাফার আনিসুল ইসলাম হিরু। এবারের আসরে মূল বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন অভিনয়শিল্পী ফেরদৌস ও মৌসুমী এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম। আয়োজকের বক্তব্য আমরা মনে করি এটি সৌন্দর্যের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা খোঁজারও একটি প্রতিযোগিতা। তবে এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ শুধুমাত্র বিউটি কনটেস্টের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকছে না। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এই প্ল্যাটফর্মটি সামাজিক সচেতনতামূলক উন্নয়ন কাজেরও অংশীদার হবে। আমরা সুন্দরভাবে এই আয়োজনটি সম্পূর্ণ করতে চাই। (মেহেদী হাসান, চেয়ারম্যান, অমিকন ইন্টারটেইনমেন্ট) দুই বিচারকের মন্তব্য ফেরদৌস : আমি যে কোনো রিয়েলিটি শোতে বিচারকের দায়িত্ব এনজয় করি। প্রতিনিয়ত একজন প্রতিযোগীর বদলে যাওয়া, পরিণত হওয়ার বিষয়টি দেখে সত্যিই আমি অবাক হই। খুবই এক্সাইটিং লাগে। ‘রিয়েলিটি শো’কে আমি খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর দায়িত্ব পালন করে আমার এমনই মনে হয়েছে। আর সম্ভবত আমি সবচেয়ে বেশি রিয়েলিটি শোর বিচারকের দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করেছি। বরাবরের মতো চেষ্টা থাকবে যোগ্য প্রতিযোগী নির্বাচন করার। মৌসুমী : এবার এই আয়োজনের মূল বিচারকের আসনে আমি থাকছি। ভালো লাগছে এমন একটি আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে। এটা তো সৌন্দর্যের বিচার নয়, বুদ্ধিমত্তারও বিচার করা হয়। আমি মনে করি, নারীকে শুধু সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করতে হবে এমনটা ঠিক নয়। নারীরা তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজে অবদান রাখছে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আমি মনে করি, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একজন প্রতিযোগী তার সংস্কৃতিকে বিশ^দরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। আর একটা কথা, আমরা যারা বিচারক হিসেবে এখানে আমন্ত্রিত তারা জানি, আমরা কখনই বিচার প্রক্রিয়ায় সমঝোতা করব না! আশা করি, কর্তৃপক্ষ আমাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত গুরুত্ব দেবেন। প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক ২০১৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। ‘বিয়ের কথা গোপন করায়’ খেতাব হারান এভ্রিল। আর নতুন করে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হন জেসিয়া ইসলাম। পান চীনে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ। প্রথম বিতর্ক শুরু হয় বিচারকদের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে। কয়েকজন বিচারক আবার দাবি করেন, তারা যাকে সেরা সুন্দরী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সর্বশেষ বিতর্ক ছিল জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের মুকুট জেতার পর তার ‘বিয়ের ঘটনা ফাঁস’ হওয়া নিয়ে। আর সেই বিতর্কে তার সেরা সুন্দরীর মুকুটটিই শেষ পর্যন্ত বাদ হয়ে যায়। আয়োজক কর্তৃপক্ষ নতুন করে জেসিয়া ইসলামকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর স্বীকৃতি দেন। এর পরের বছর প্রশ্ন উঠে প্রতিযোগীদের মেধা নিয়ে। কেউ কেউ ভালো চোখে দেখেননি বিচারকদের প্রশ্ন করার ধরনকেও। এক প্রতিযোগীর কাছে বিচারক র‌্যাম্প মডেল খালেদ সুজন জানতে চান, ‘এইচটুও (পানির রাসায়নিক সংকেত) কী?’ উত্তরে প্রতিযোগী বলেন, ধানমন্ডিতে এই নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। প্রতিযোগিতা শেষ হতে না হতেই ভাইরাল হয় এর ক্লিপ। এ ছাড়া প্রশ্নোত্তর পর্বের আরো কিছু অংশও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। দেশের অন্যান্য সুন্দরী প্রতিযোগিতা ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতা বা প্রথম আয়োজন করেন সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রয়াত সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী। ওই একই গ্রুপের আরেকটি বিনোদন পত্রিকা ‘আনন্দ বিচিত্রা’র ব্যানারে তখন আয়োজন করা হয়েছিল ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো সুন্দরী’। এরপর ১৯৯৫ সালে ওই প্রতিযোগিতার নাম হয় ‘লাক্স-আনন্দ বিচিত্রা ফটো সুন্দরী’। ওই প্রতিযোগিতায় শুধু ছবির ওপর ভিত্তি করে ফটোসুন্দরী নির্বাচন করা হতো। র‌্যাম্পে হাঁটা বা প্রশ্নের জবাব দেয়ার কোনো বিষয় ছিল না। চিত্রনায়িকা মৌসুমী ওই প্রতিযোগিতায় প্রধান হয়েই গ্ল্যামার জগতে উঠে আসেন। পরে তিনি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির নায়িকা হন। চিত্রনায়িকা পপিও একই প্রতিযোগিতা থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর চিত্রজগতে আসেন এবং ‘কুলি’ ছবির নায়িকা হন। তারপর আলোচনায় আসে লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতা। ২০০৫ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আর প্রথম লাক্স সুন্দরী হন শানারেই দেবী শানু। এই প্রতিযোগিতাকে অনুসরণ করে কিছু আসর বসে। যাদের মধ্যে ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল, এটিএন-এর ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ আর মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর মধ্যে সুপার হিরো সুপার হিরোইন প্রথম বছরের পরই বন্ধ হয়ে যায়। একুশে টিভির ‘মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ প্রাথমিক কাজ শুরু করলেও পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতাই সবচেয়ে আলোচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App