×

জাতীয়

ডেসটিনি-হলমার্কের বিচারে কচ্ছপগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১৬ এএম

ডেসটিনি-হলমার্কের বিচারে কচ্ছপগতি
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে যে কোনো মামলা দায়েরের পরবর্তী ৬ মাসের (১৮০) মধ্যে তদন্ত শেষ করার বিধান রয়েছে। আর বিচার শুরু হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করারও কথা। কিন্তু দুদকের মামলার বেশির ভাগই দেখা যায়, মামলা দায়েরের পর দুই থেকে আড়াই বছর লেগে যায় শুধু তদন্ত শেষ করতে। একইভাবে বিচার শুরু হওয়ার পর বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও শেষ হয় না বিচারকাজ। আর্থিক খাতের আলোচিত দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনায় দায়ের করা ডেসটিনি ও হলমার্কের মতো চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ ৬০ দিনে মামলা নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একটি সার্কুলারও জারি আছে। জানা যায়, ডেসটিনির বিরুদ্ধে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি পাচারের দুই মামলা এবং সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ-দুর্নীতির ১১ মামলার বিচার শুরু হয় চার বছর আগে। এখন পর্যন্ত সেগুলোর অগ্রগতি সামান্যই। আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং একই আদালতে অন্য মামলারও বিচারকাজ চলায় তা এগোচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। ফলে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড ও হলমার্ক গ্রæপের মামলাগুলোর বিচার কবে শেষ হতে পারে তা কেউই বলতে পারছেন না। ডেসটিনি ও হলমার্কের ১৩ মামলায় মোট আসামি ৭৬, যাদের মধ্যে ৫৫ জনই পলাতক। আজ পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পলাতক আসামিদের মধ্যে ডেসটিনির মামলায় ৩৯ এবং হলমার্কের মামলায় ১৬ জন। আবার ডেসটিনির মামলা দুটি মানিলন্ডারিং আইনে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছর কারাদণ্ড। অথচ গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রায় আট বছর ধরে কারাগারে। তাই সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদের মধ্যেও মামলাগুলোর বিচার শেষ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। একই অবস্থা হলমার্কের মামলায়ও। আদালতের নথি থেকে দেখা যায়, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ডেসটিনির বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করেন। ঘটনা তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। পরে ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলা দুটি ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে ওই আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এর মধ্যে একটি মামলা এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু বিচার শেষ না হওয়ায় চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপর আবারো সময় বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, হাইকোর্ট সময় বেঁধে দেয়ার পরই মামলার বিচারে কিছুটা গতি আসে। বর্তমানে সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার সাক্ষ্য নেয়ার কার্যক্রম চলছে। তবে চার্জশিটে থাকা ৩০৩ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে কেবল। ডেসটিনির অন্য মামলার বিচারে তেমন অগ্রগতি নেই। অন্যান্য মামলার মতোই দীর্ঘ সময় পর পর তারিখ ধার্য হয়ে বিচার কার্যক্রম চলছে। চার্জশিটভুক্ত ২১৯ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র তিনজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করে দুদক। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলোর বিচার চলছে। ওই আদালতের বর্তমান বিচারক সৈয়দ হোসনে আরা। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, একটি মামলায় সর্বোচ্চ ৩৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়া মামলার চার্জশিটে মোট সাক্ষী ৮১ জন। অন্য মামলাগুলোয় নেয়া হয়েছে ১৯ থেকে ২৪ জন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য। মূলত তিনটি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সময় বেঁধে দেয়া আছে। সেগুলোর সাক্ষ্যই কিছুটা বেশি নেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, যে আদালতে বিচার চলছে, সেখানে কেবল ওই মামলাগুলোর বিচারই হচ্ছে না, অন্যান্য মামলার বিচারও চলছে। তাই মামলাগুলোর সাক্ষ্য নেয়ার দিনও বেশ কিছু দিন পর পর হয়। কিছু মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত নিষ্পত্তির। তবে প্রথম দিকে আসামিপক্ষের বিভিন্ন অজুহাতের কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়েছিল। এখন দ্রুত করার চেষ্টা চলছে। তবে ডেসটিনির মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আসামিরপক্ষের কারণে মামলার বিচার বিলম্বিত হয়েছে বা হচ্ছে এমন তথ্য সঠিক নয়। বরং আসামিপক্ষ মামলার দ্রæত নিষ্পত্তি চায়। কেননা এ মামলার আসামিরা প্রায় আট বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, মানিল্ডারিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই বিচারে আসামিরা বেকসুর খালাস পাবেন। বর্তমানে ডেসটিনির মামলায় প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. রফিকুল আমীন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, সাঈদুল ইসলাম খান (রুবেল) ও জেসমিন আক্তার (মিলন) কারাগারে রয়েছেন। জামিনে রয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ ও মো. জিয়াউল হক মোল্লা। অন্যদিকে হলমার্কের ১১ মামলায় আসামি ২৫ জন। যাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির এমডি তানভীর মাহমুদ, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, ডিএমডি মাইনুল হক (বর্তমানে ওএসডি) এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) কারাগারে রয়েছেন। জামিনে রয়েছেন তানভীর মাহমুদের স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, দুই উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার। ডেসটিনির মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহউদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মো. আকবর হোসেন সুমন, মো. সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. শফিউল ইসলাম, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, মেজর (অব) সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. শফিকুল হক। হলমার্কের মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক মো. আব্দুল বাছির, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল নাথ (বর্তমানে ওএসডি), প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, এজিএম এজাজ আহম্মেদ, সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App