×

মুক্তচিন্তা

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া উচিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম

পানির মৌলিক উৎসগুলোর মধ্যে বৃষ্টির পানি অন্যতম। ২০১০ সালের পর থেকে ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে বিকল্প পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং কনভেনশন। সম্মেলনে মূলত বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নীতিমালা, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায় থেকে গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করছি। আমরা জানি, সমগ্র পৃথিবীতে পানির পরিমাণ ও মান হ্রাস পাচ্ছে। পরিত্যক্ত পানির শোষণ ও পানীয় জলের শুদ্ধিকরণ বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ পানি ছাড়া প্রাণী বা উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না। পানির অপচয়ের মাত্রা দিনে দিনে বাড়ছে। পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী চার দশকের মধ্যে আমাদের দেশের ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ভয়ঙ্করভাবে হ্রাস পাবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বারবার এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন। আমরা বিষয়গুলো আমলে নিচ্ছি না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। এসব অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ সুফল দেবে। বাংলাদেশে গড়ে ২ হাজার ৪৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ঝুঁকি বিবেচনায় দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে অসুখ-বিসুখের ভয় কম। প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আমাদের মানসিকতা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারের সমন্বয়ের মাধ্যমে এটা সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ১৯ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যাতে সরকারি ভবনগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছিল। ভূগর্ভে যেন বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে পরিবেশ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ক্রমেই আবহাওয়া উত্তপ্ত হচ্ছে। মানুষের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়ার সময় এসেছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটিও সহজ। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার পর তা পরিষ্কার করে ছয় থেকে নয় মাস মেয়াদে সহজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। যদি ছয় মাসের মধ্যে বৃষ্টি নাও হয় তাতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ বছরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তা দিয়ে বাংলাদেশের সব চাহিদার অবসান ঘটানো সম্ভব। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আমাদের দেশে আইন রয়েছে। তার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। পানি অফুরন্ত সম্পদ নয়, সীমিত সম্পদ। তাই পানির গুরুত্ব অনুধাবন করে পানির উৎসগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও বৃষ্টির পানি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু পানি সংকট মোকাবেলা নয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায়ও এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App