×

সাময়িকী

দেশাত্মবোধক গানে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১৬ পিএম

দেশাত্মবোধক গানে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়

আবু হেনার গান সম্পর্কে ড. আনিসুজ্জামানের মূল্যায়ন, ‘আবু হেনার কবিতার মতো গানেও প্রাধান্য প্রেম। এক মোহমুগ্ধ, স্বপ্নচারী, আবেগময় সত্তা ক্রিয়াশীল ছিল তাঁর অধিকাংশ গীত রচনার ক্ষেত্রে।’ ভাষা, ছন্দ, অলংকার বিন্যাসে পরিশীলিত আবু হেনার গান। কিন্তু এখানেও যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেটি হলো সংযম ও পরিমিতিবোধ। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৫ সালে দুই শতাধিক গান নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘আমি সাগরের নীল’ নামের গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব কণ্ঠশিল্পী আবু হেনার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তবে তাঁর গান বেশি প্রাণবন্ত হয়েছে আনোয়ার উদ্দিন খান, আবু বকর খান, মাহামুদুন্নবী, ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমীন ও রুনা লায়লার কণ্ঠে।

‘এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে গেলে গান’, ‘বলাকা মন হারাতে চায়’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’ এই তিনটি গান ১৯৭০-এর দশকের শেষ প্রান্ত থেকে ১৯৮০-এর দশকের শুরু অর্থাৎ এক যুগেরও বেশি সময় এ দেশের শ্রোতাদের উন্মাতাল করে রেখেছিল। ছোটবেলায় আমরা দেখতাম ঘরে-বাইরে এই গানগুলো সবাই গুন গুন করতেন। তখন রেডিওর রমরমা সময়। প্রতিদিন এই গানগুলো বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজানো হতো। গানগুলোর হৃদয়ছোঁয়া কথা আর শ্রুতিস্নিগ্ধ সুর পুরো জাতিকে যেন আবিষ্ট করে রেখেছিল। তিনটি গানেরই গীতিকার ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (তিনটি গানের সুরকারও একজন- সুবল দাশ।) আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা গান মানেই দুর্দান্ত কিছু রচনা। শ্রোতারা যথেষ্ট সমাদর আর সম্ভ্রমের সঙ্গেই গ্রহণ করতেন সে গান। আর এই গানগুলোর সুর স্রষ্টারাও ছিলেন এ দেশের সব ডাকসাইটে সংগীতকার। আনোয়ার উদ্দিন খান, আবু বকর খান, আবদুল আহাদ, কাদের জামেরী, আবিদ হোসেন খান, মশিহ উল আলম, মীর কাসেম খান, মনসুর আহমেদ, শেখ মোহিতুল হক, খোন্দকার নুরুল আলম, শেখ সাদী খান, অজিত রায়, সুবল দাস, অনুপ ভট্টাচার্য্য, দেবু ভট্টাচার্য্য, সমর দাস, রাজা হোসেন খান, জালাল আহমেদ, সৈয়দ আনোয়ার মুফতী প্রমুখ। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এঁদের বেশির ভাগই শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ। এঁদের সুরের ধ্রুপদিয়ানার সঙ্গে আবু হেনার কাব্যরস সম্পন্ন কথার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটতো। আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা গানের শব্দচয়ন ও বাক্যগঠন ছিল অনির্বচনীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ের আধুনিক। সঙ্গে সঙ্গে কাব্যময়তারও চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটতো প্রতিটি শব্দে ও বাক্যে। শুনলে মনে হতো এটাই যেন হওয়ার কথা, এর আর কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর সুরকারদের অখণ্ড মনোনিবেশ সম্পন্ন সহযোগিতা। যে কারণে আবু হেনার সব গানই স্মরণীয়তা পেয়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্মও এসব গানের সমান অনুরাগী। তাঁর গানগুলো এরা নতুন সংগীতায়োজনে গাইছেন। আবু হেনা মোস্তফা কামাল অনেক গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। গায়ক, কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, প্রশাসক, অধ্যাপক, বেতার ও টেলিভিশনের সঞ্চালক, বাগ্মী। সহজাত প্রতিভার গুণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সফল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, তাঁর গীতিকবি পরিচয়টাই সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য। ২০০০-এর মতো গান লিখেছেন। যদিও সব গান সুরারোপিত হয়নি। বাংলা গানের আরেক যশস্বী গীতিকবি গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, ‘এপার বাংলায় গান লিখি আমি, আর ওপার বাংলায় লেখে হেনা। আমরা দুজনই পাবনার মানুষ।’ একজন গীতিকারের সুরের ওপর ভালো ধারণা থাকেই। না হয় গান লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু একজন গীতিকার যখন নিজেই কণ্ঠশিল্পী হন তখন তা হয় সোনায় সোহাগা। আবু হেনা মোস্তফা কামালের বেলায় তাই হয়েছিল বলেই তাঁর গানগুলো সফল গীতি কবিতা হয়ে উঠতে পেরেছিল। তাঁর লেখা গানগুলো যখন সুরারোপিত হতো, তখন প্রথমে তিনি নিজেই গেয়ে শুনে নিতেন এবং প্রয়োজনে পরামর্শও করতেন সুরকারের সঙ্গে। রেকর্ডিংয়ের সময়ও উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করতেন। চলচ্চিত্রের গানগুলোর দৃশ্যায়নের সময়ও তিনি উপস্থিত থাকতেন সময় পেলে। আবু হেনার মা খালেসুন নেসা খুব ভালো গান গাইতেন। শৈশবে মায়ের কাছেই তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি। তখন থেকেই কণ্ঠশিল্পী হওয়ার বাসনা ছিল। যৌবনে বেতার (ঢাকা) ও টেলিভিশনে গান করেছেন নিয়মিতভাবে। শৈশব থেকেই কবিতা লিখতেন। আর গান লেখার শুরু কলেজ জীবনের শুরুতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই রচনা করেছেন কালজয়ী অনেক গান, যেগুলোতে সুর করেছেন এবং গেয়েছেন সহপাঠী আনোয়ার উদ্দিন খান, আসফউদ দৌলা ও আবু বকর খান। এই চারজন মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি অঙ্গনে গড়ে তুলেছিলেন প্রাণবন্ত এক পরিবৃত্ত। সংগীতের ক্ষেত্রে এই চতুষ্টয় স্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন। স্ব-স্ব পেশাতেও এঁরা সফল। আবু হেনা মোস্তফা কামাল এ দেশের একজন স্মরণীয় কবি। প্রাবন্ধিক আহমদ কবিরের কথায়, ‘অন্তরঙ্গ অনুভব, গাঢ় আবেগ, রোমান্টিক আর্তি এবং কখনো কখনো স্বদেশবোধের শিল্পিত পরিচর্যা তাঁর কবিতা ও গানগুলোকে বিশিষ্টতা দিয়েছে।’ আবু হেনার তিনটি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ; আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪), যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪) ও আক্রান্ত গজল (১৯৮৮)। তিনটি গ্রন্থে বেশি কবিতা নেই। শতাধিক। তাঁর বেশির ভাগ কবিতা অপ্রকাশিত এবং অগ্রন্থিত রয়ে গেছে। তাঁর কবিতা সম্পর্কে ড. আনিসুজ্জামানের মূল্যায়ন, ‘কবিতায় কখনো তিনি সীমা লঙ্ঘন করেন না। এই সংযম তাঁর স্বভাবজাত নয়, অর্জিত। এবং সংযমের ফলে তাঁর অনেক কবিতা বলা-না বলার আলোছায়ায় ঘিরে থাকে। স্তবক, চরণ, শব্দ সরিয়ে সরিয়ে পাঠককে তার অন্দরমহলে প্রবেশ করতে হয়। প্রায় চল্লিশ বছরের সাধনায় আবু হেনা বিস্তর ফসল ফলাননি বটে, কিন্তু যা ফলিয়েছেন তার অধিকাংশই স্বর্ণশস্য। আরো আশ্চর্য এই যে, নিজেকে নতুন করে নিতে তাঁকে বেশি কালক্ষয় করতে হয়নি, অধিক ভাবতে হয়নি।’ এই সংযম আবু হেনা তাঁর সৃষ্টিশীলতার সর্বক্ষেত্রে প্রকাশ করে গেছেন। পেশাগত জীবনে, ব্যক্তি জীবনে সর্বত্র। এর মধ্যে দিয়ে তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন উৎকৃষ্টমানের প্রাবন্ধিক। কবিতা দিয়ে সাহিত্যে যাত্রা শুরু হলেও প্রবন্ধ ও সমালোচনা সাহিত্যেও তিনি ছিলেন সফল। মননশীল এসব রচনায় সময়, সমাজ, সমকাল সাহিত্য সংস্কৃতির বহুবিধ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু মাত্র দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর; ‘শিল্পীর রূপান্তর’ (১৯৭৫) এবং ‘কথা ও কবিতা’ (১৯৮১)। অনেক প্রবন্ধ অগ্রন্থিত। তেমনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেক কলাম লিখেছেন। শৈশব-কৈশোরের নানা ঘটনার কথা লিখেছেন বাংলা একাডেমির ধান শালিকের দেশ পত্রিকায়। এসব লেখা নিয়ে আবু হেনার মৃত্যুর অনেক পরে ২০০০ সালে ‘কথা সমগ্র’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আবু হেনার গান সম্পর্কে ড. আনিসুজ্জামানের মূল্যায়ন, ‘আবু হেনার কবিতার মতো গানেও প্রাধান্য প্রেম। এক মোহমুগ্ধ, স্বপ্নচারী, আবেগময় সত্তা ক্রিয়াশীল ছিল তাঁর অধিকাংশ গীত রচনার ক্ষেত্রে।’ ভাষা, ছন্দ, অলংকার বিন্যাসে পরিশীলিত আবু হেনার গান। কিন্তু এখানেও যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেটি হলো সংযম ও পরিমিতিবোধ। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৫ সালে দুই শতাধিক গান নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘আমি সাগরের নীল’ নামের গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব কণ্ঠশিল্পী আবু হেনার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তবে তাঁর গান বেশি প্রাণবন্ত হয়েছে আনোয়ার উদ্দিন খান, আবু বকর খান, মাহামুদুন্নবী, ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমীন ও রুনা লায়লার কণ্ঠে।

অনেক ছবির গান লিখেছেন তিনি, যার মধ্যে দর্পচূর্ণ, যোগ-বিয়োগ, ঢেউয়ের পর ঢেউ, আঁকাবাঁকা, অনির্বাণ, সমর্পণ, অসাধারণ, উপহার, কলমীলতা উল্লেখযোগ্য। এ ক্ষেত্রেও তিনি পরিমিত বোধের পরিচয় দিয়েছেন। চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেছেন অত্যন্ত নির্বাচিতভাবে। মুস্তফা আনোয়ার পরিচালিত অসাধারণ ছবির চিত্রনাট্যও তাঁর লেখা। আবু হেনার লেখা কয়েকটি গানের উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। আমি নদীর মতো কতপথ ঘুরে, এই পৃথিবীর পান্থশালায়, বলাকা মন হারাতে চায়, নদীর মাঝি বলে এসো নবীন, যায় যদি যাক প্রাণ, শূন্য হাতে আজ এসেছি, তুমি যে আমার কবিতা, আমি সাগরের নীল, সেই চম্পা নদীর তীরে, তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে, অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে, হাতের কাঁকন ফেলেছি খুলে, ঘুম পরী তোর ময়ূরপঙ্খী নাও ভিড়িয়ে আয়, অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, ভ্রমরের পাখনা যত দূরে যাক না। দেশাত্মবোধক গানে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তাঁর রচিত গানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ১৯৬৪ সালে ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয় ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা ‘ঐ যে আকাশী নীল হলো আজ, সে শুধু তোমার প্রেমে’ গানটি প্রচারের মধ্য দিয়ে। গানটির সুরকার ছিলেন আবদুল আহাদ। আবু হেনার হাতে যেন পরশ পাথর ছিল। যেখানে তিনি হাত দিয়েছেন সোনার ফসল ফলেছে। মাত্র ৫৩ বছরের স্বল্পায়ুর জীবনে অনেক সফল কৃতি ও কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গেছেন ক্ষণজন্মা এই মানুষ। ১৯৩৬ সালের ১২ মার্চ পাবনার উল্লাপাড়া উপজেলার (বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলায়) গোবিন্দগ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা এম শাহজাহান আলী ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ১৯৫২ সালে আবু হেনা পাবনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ১৩তম স্থান অধিকার করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ৭ম স্থান অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে ১৯৬৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দ্য বেঙ্গলি প্রেস এন্ড লিটারারি রাইটিং (১৮১৮-১৮৩১)’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী কলেজেও শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক হয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন অস্থায়ী প্রভাষক পদে। ১৯৬৫ সালে প্রভাষক পদে স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এখানে তিনি ছিলেন ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৩ সালের ৫ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। এখানে তিনি ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৭৮ সালে আবু হেনা অধ্যাপক হিসেবে পুনরায় যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে যোগদান করেন মহাপরিচালক হিসেবে। এটাই তাঁর শেষ কর্মস্থল। শেষোক্ত দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি মৌলিক অনেক পরিবর্তন আনেন দুই প্রতিষ্ঠানে। আবু হেনা শিক্ষক হিসেবেও সর্বত্র ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাঁর লেকচার শুনতে বাংলা বিভাগের ক্লাসে আসতেন। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সমাদৃত। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাঁর সঞ্চালিত একটি অত্যন্ত দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল ‘আমার প্রিয় গান’। ১৯৫৬ সালে ২৫ অক্টোবর হালিমা মোস্তফার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনের শুরু। তাঁদের চার কন্যা এক পুত্র। কন্যারা অন্য পেশাতে সফল হলেও পুত্র সুজিত মোস্তফা পিতার পদাংক অনুসরণ করে সংগীত জগতে সুনামখ্যাত। ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের জীবনের শেষ অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এক দীর্ঘ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা। এই অনুষ্ঠান প্রচারের কয়েকদিন পর তিনি প্রয়াত হন। বাংলা একাডেমিতে কর্মরত অবস্থায় আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণ ঘটে। কাকতালীয়ভাবে তাঁর মৃত্যুর তিনদিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ প্রয়াত হন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের প্রয়াণের ৩০তম বার্ষিকী। প্রয়াণ বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App