×

জাতীয়

যে কারণে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫০ এএম

যে কারণে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীর ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছেন যুবলীগের দুই নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া। তাদের সঙ্গী হতে যাচ্ছেন আরো অন্তত দেড় ডজন নেতা। ইতোমধ্যে সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে দুই দফায় শোকজ চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী শনিবার যুবলীগের নিজস্ব ‘ট্রাইব্যুনালে’ মুখোমুখি হবে দুই নেতা। তারপরই আসবে অ্যাকশন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পর শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে যুবলীগ। এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি করা হবে। এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়াকে প্রথমবার শোকজ চিঠি পাঠানোর পর জবাব মনঃপূত না হওয়ায় দ্বিতীয়বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির জবাব নিয়ে সরাসরি তাদের সঙ্গে বসা হবে। গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, গণভবনের বৈঠকে যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোভন-রাব্বানীর চেয়ে এরা আরো খারাপ। ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি তো ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এখন দিনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু গত বৈঠকেই নয়, এর আগেও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জুয়া ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক : অস্ত্রবাজি-চাঁদাবাজি-দখলবাজি-খুন-টেন্ডারবাজি কি অভিযোগ নেই যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে! এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে জুয়ার ব্যবসা। ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ কয়েক নেতার হাতেই রাজধানীর জুয়ার ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রণ। সেগুনবাগিচা, গুলিস্তানসহ অন্তত ৫০টি আসরে দাপটে রাজত্ব করছেন তারা। কেউ কেউ ফুলে ফেঁপে উঠছেন জুয়ার ব্যবসায়। গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সারাদেশের প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-অস্ত্রবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। যুবলীগের কতিপয় নেতার এসব অপকর্মের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগের ভেতরে শুদ্ধি অভিযানে তাদের ট্রাইব্যুনাল আছে। সেখানে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, রুলিং পার্টির সবসময়ই সমস্যা হয়। কিছু আগাছা-পরগাছা জড়ো হয়। সুবিধাবাদীরা দলে ঢুকে পড়ে। তখন এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্লিন ইমেজ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি কোনো দুর্নীতিবাজকে দলে প্রশ্রয় দেন না। তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এ অভিযান আরো কঠোর হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন দলকে স্বচ্ছ করতে, দুর্নীতি মুক্ত করতে। আমি মনে করি দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। যুবলীগের অতীত রেকর্ড : আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটির অতীত রেকর্ডও নানা অনিয়ম আর অভিযোগের পাহাড় জমেছে। চলতি বছরের ১ জুলাই সকাল থেকে ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, যুবলীগ কর্মী মহসিনকে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছেন ৪-৫ জন যুবক। ৩০ জুন চট্টগ্রামে আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকার এন বøকে বাসায় ফেরার পথে নিজ দলের প্রতিপক্ষের হাতে হামলার শিকার হন যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ মহসিন। গত বছর চাঁদার কারণে দাতব্য প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের লোকজন। ঘটনার অভিযোগ পৌঁছেছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত। এতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় বাসার সামনে পিটিয়ে খুন করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এ ঘটনায় জড়িতরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী। ১৬ সেপ্টেম্বর সকা?লে বান্দরবা?নে অগ্রণী ব্যাং?কের ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বান্দরবান সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ক্যচিং অং মারমাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ-১০ আসনের সাংসদ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের ব্যক্তিগত সহকারী ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাছান ইলিয়াসকে স্ত্রীর সামনে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় যুবলীগের একজন কর্মী র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ মারা যায়। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল পঞ্চগড়ে পুকুর ইজারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পৌর ছাত্রলীগের নেতা ফারুক হোসেন নিহত হন। ২০০৯ সালের ১১ জুলাই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন যুবলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথা। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ২০ জনের বিরুদ্ধে : যুবলীগে নিজস্ব ‘ট্রাইব্যুনাল’ চালু আছে অনেক দিন ধরেই। ট্রাইব্যুনালের প্রধান হলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আর প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এর মেম্বার। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ট্রাইব্যুনাল বসে। ইতোমধ্যে এই ট্রাইবুন্যালে শাস্তি পেয়েছেন ২০ জন। এরমধ্যে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, একজন মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। ভূমি দখলের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু, রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছেলে ও ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাতবর, নিজ স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে সাভার থানা যুবলীগের সভাপতি সেলিম মণ্ডল, ধর্ষণের অভিযোগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মো. লিটন রানাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের সুনাম বিনষ্টকারী কাউকে ছাড় নয় মন্তব্য করে ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজকে বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ ফৌজদারি হলে থানায় সোপর্দ করি। আর তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে আমরা যাচাই-বাছাই করে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার করি। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা প্রসঙ্গে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আমরা গত রবিবারই তাদের শোকজ করেছি। তারা উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু জবাব আমাদের মনঃপূত না হওয়ায় আবারো ব্যাখ্যা চেয়েছি। আগামী শনিবার আমরা বসব। তিনি বলেন, এবারের অভিযোগ, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নয়। বৈঠকের বরাত দিয়ে অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। তাই আমাদের হাতে সঠিক কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হয় তাহলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নিয়ে কী বলেছেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে অপরাধী যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালে তাদের সঙ্গে বসবো। অভিযোগ খণ্ডাতে না পারলে বহিষ্কার। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুবলীগে জিরো টলারেন্স নীতি। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমরা কাউকে চিনি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App