×

জাতীয়

ডেঙ্গুর পর অ্যানথ্রাক্স ও কঙ্গো নিয়ে শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১৯ এএম

ডেঙ্গুর পর অ্যানথ্রাক্স ও কঙ্গো নিয়ে শঙ্কা
ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসতেই দেশের কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখা দিয়েছে কঙ্গো ফিভার। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কঙ্গো ফিভারে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া না গেলেও এ রোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে বর্ষার সময় বা বর্ষার পরই অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা যায়। যেসব এলাকায় গবাদি পশু বেশি পালন করা হয় সেসব এলাকাতেই সাধারণত অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ বেশি থাকে। আমাদের দেশে এ রোগের ৯০ শতাংশই আক্রান্ত হয় মেহেরপুরের গাংনীতে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে গাংনীতেই কেন বেশি আক্রান্ত হয় এ বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। কঙ্গো ফিভার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এই উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তান ও ভারতে কঙ্গো ফিভারে আক্রান্ত অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, সে ক্ষেত্রে আমাদের তো ঝুঁকি থাকেই। তবে এখনই শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আমাদের দেশে কঙ্গো ফিভার আসতে কিছুটা সময় লাগবে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ভোরের কাগজকে জানান, পশুর মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছাড়ায়। গরু, ছাগল, মহিষ এ ধরনের পশুর মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়। বাংলাদেশে সাধারণত কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই এ রোগ হয়ে থাকে। গাংনীতে এ রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ায় সেখানে আমাদের নজরদারি দল রয়েছে। তাই সেখানে রোগী শনাক্ত হলে তা খবরে আসে। মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস কাটার সময় মানুষের মধ্যে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কঙ্গো ফিভার নিয়ে এখনো পর্যন্ত আশঙ্কা করছেন না জানিয়ে এই গবেষক বলেন, জ্বরবাহিত বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ সব ধরনের জ¦র আমরা নজরদারিতে আনতে যাচ্ছি। যদিও কাজটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ডেঙ্গু উপদ্রুত এলাকা এবং জ্বর বেশি ছিল এমন এলাকা, বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোকেও এই নজরদারির আওতায় আনা হবে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ৬-৭টি এলাকা আমরা নজরদারিতে রাখব। আশা করছি, আগামী দুয়েক মাসের মধ্যেই নজরদারির কাজ শুরু করতে পারব। চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, সবখানেই অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় আছে। ৪০ বছর পর্যন্ত এরা বেঁচে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এ জীবাণু সক্রিয় হতে পারে। গরু-ছাগল যখন ঘাস খায় তখন এর মাধ্যমেই এই জীবাণু পশুর শরীরে ঢুকে যায়। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগের বিস্তার বেড়েছে। মানুষের অ্যানথ্রাক্স মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হয় পরিপাকতন্ত্রে অন্যটি শরীরের বাইরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স হলে সাধারণত হালকা জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বাংলাদেশে এ রোগ শরীরের বাইরের অংশে প্রভাব ফেলে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া বা ফোস্কা হয়ে থাকে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে অ্যানথ্রাক্স রোগটি গোটা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ২০১০ সালে। পরবর্তী সময়ে এ রোগের বিস্তার রোধে টিকা দেয়া হয়। কঙ্গো ফিভার প্রসঙ্গে তারা বলেন, প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত এঁটেল পোকা থেকেই এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত পোকা পশুকে কামড়ালে, তার মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ায়। আক্রান্ত পশু থেকে এ রোগের বিস্তার ঘটে মানুষের মধ্যে। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোর ইবোলা নদীর কাছে প্রথম কঙ্গো ফিভারের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কেউ বলেন, ক্রিমিয়াতে ১৯৪৪ সালে এই জ্বর চিহ্নিত হয়েছিল। যে কারণে এই জ্বরের নাম দেয়া হয় ক্রিমিয়ান কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার বা সিসিএইচএফ বা কঙ্গো ফিভার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কঙ্গো ফিভার হলে হঠাৎ করেই জ্বর আসে বমি হয়, মাথা-পেশি-ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হয় এবং চোখ জ্বালাপোড়া করে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি তিন জনের মধ্যে গড়ে একজনের মৃত্যু ঘটে। সম্প্রতি ভারতের গুজরাটে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App