×

জাতীয়

শোভন-রাব্বানীর একাকী একদিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪১ এএম

শোভন-রাব্বানীর একাকী একদিন
সর্বদা নেতাকর্মীদের ভিড়ে থাকতেন। যেখানেই যেতেন সেখানেই ছিল প্রটোকলের লম্বা বহর। মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ভবন, পার্টি অফিস, টিএসসি চত্বর এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকত বাসার নিচেও। প্রিয় নেতা, প্রিয় ভাইকে একবার সালাম দেয়ার জন্য ছিল দীর্ঘলাইন, ভিড়, হুড়োহুড়ি, নেতাকে এক নজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা। গত শনিবার রাত পর্যন্ত এমন চিত্রই ছিল। কিন্তু একদিনের ব্যবধানেই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। রাতারাতি বদলে গেল ভাই। তাদের পেছনে এখন আর কেউ নেই। পদ হারিয়ে এখন নিঃস্ব, রিক্ত। সারাদিন কেটেছে নিজ বাড়িতেই। বাড়ির সামনে নেই কোনো ভিড়, নেই কোনো কর্মী, নেই সালাম দেয়ার কেউ। এমন পরিস্থিতিতে এখন সদ্য পদহারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থা হারিয়ে অনেকটাই একা হয়ে পড়েছেন তারা। পদ হারানোর পর শুয়ে-বসেই কেটেছে তাদের প্রথম দিন। প্রধানমন্ত্রী বিমুখ হওয়ায় নেতাকর্মীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাদের কাছ থেকে। সবাই এখন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। এতদিনে যেসব কর্মীর ফেসবুকে প্রোফাইল ছিল শোভন-রাব্বানীর ছবি। এখন তা সরিয়ে নিয়েছেন সবাই। সে জায়গায় যুক্ত হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ছবি। জানা গেছে, গত শনিবার রাতে পদ হারানোর পর শোভন ও রাব্বানী গিয়েছিলেন হাতিরঝিলে। রাত ১২টার পর ফেসবুকে আপলোড করা ছবিতে তাদের সঙ্গে দেখা গেছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া জয় ও লেখককে। সঙ্গে ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক যুবায়ের আহমেদকে। এরপর সেখান থেকে তারা গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানমুনকে দেখতে। এরপর তারা ৪ জন টিএসসিতে এলে শোভন-রাব্বানীর উপস্থিতিতেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন কর্মীরা। পরে পাত্তা না পেয়ে অনেকটা অভিমানের সুরেই কর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান তারা। শোভন চলে যান তার গ্রিন রোডের বাসায়। আর রাব্বানী চলে যান হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার বাসায়। এরপর গতকাল রাত পর্যন্ত বাসা থেকে বের হননি তারা। এমনকি কোনো নেতাকর্মীও তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেননি। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন মুঠোফোনে গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, সারাদিন কোথাও বের হইনি, বিশ্রামেই ছিলাম বাসায়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এখনো কিছু ঠিক করিনি। ছাত্রলীগকে ভালোবাসি। আমি শেখ হাসিনার কর্মী। তিনি আমার জন্য যা ভালো মনে করবেন, আমি তাই করব। তার হুকুমের বাইরে যাব না। এদিকে শোভন সরাসরি কিছু না বললেও, তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থা হারিয়ে শোভন অনেকটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া করছেন না। বাসাতেও কারো সঙ্গে তেমন কথা বলছেন না। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বার-এট ল’ করার জন্য লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন তিনি। আর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ব্যক্তিগত চারটি মুঠোফোন নম্বরের দুটি বন্ধ পাওয়া গেছে। অপর দুটিতে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে তার ঘনিষ্ঠসূত্রে জানা গেছে, সারাদিনে পরিচিত কারোই ফোন রিসিভ করেননি রাব্বানী। শেখ হাসিনার আস্থা হারানোয় দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠরাও এড়িয়ে চলছেন তাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোলাম রাব্বানীর একজন অনুসারী ছাত্রলীগের সহসভাপতি জানান, যে কারণে ছাত্রলীগ থেকে পদ হারিয়েছেন রাব্বানী। সেই একই কারণে ডাকসুর জিএস পদ হারানোর শঙ্কায় আরো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App