×

জাতীয়

শেখ হাসিনার কড়া বার্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩৩ এএম

অপকর্মে জড়িতদের কোনো ছাড় নয়- দলীয় নেতাদের এমন কড়া বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত শনিবার রাতে গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভায় তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন, সরকারের অর্জন ম্লান হয়- কোনো নেতার এমন আচরণ ও কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। প্রয়োজনে কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে; যেমনটি হয়েছে ছাত্রলীগের সদ্য পদ হারানো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে। এমনকি কোনো নেতা দুর্নীতি বা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে আইনি ঝামেলায় পড়লেও দল ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। এ সময় তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে যুবলীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব সংগঠনের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। টানা তিন মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকলেও নেতাদের অনেকেই দুর্দিনের কর্মীদের খোঁজ না রাখায় আক্ষেপও প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। দলের নেতাদের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল থাকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার দলে ক্যাডার পলিটিক্সের কোনো স্থান নেই। যারা ক্যাডার পলিটিক্স করবে, মদদ দেবে তারা ছাড় পাবে না। কিছু কিছু ঘটনার জন্য আমার অর্জন ম্লান হবে, সেটা কোনোভাবেই আমি বরদাশত করব না। যারা ক্যাডার পলিটিক্স করে, ক্যাডারদের মদদ দেয়- তাদের স্থান আওয়ামী লীগে হবে না। যারাই দাম্ভিকতা দেখাবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সরকারের সুনাম নষ্ট করবে- তাদের এক চুলও ছাড় দেব না। তিনি বলেন, অপরাধী অপরাধীই, অপরাধীর স্থান আমার কাছে নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আমি বলব, সবার সঙ্গেই সহনশীল আচরণ করতে হবে। বিশাল বহর নিয়ে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। আপনাদের হোন্ডাবহরের কারণে মানুষ যেন কষ্ট না পায়। মানুষ যেন পেছন থেকে খারাপ কোনো কথা না বলে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যারা মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তারা যতই প্রভাবশালী হোক দলে তাদের ঠাঁই হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ভোরের কাগজকে জানান, আলোচনার একপর্যায়ে শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী দলীয়ভাবে উদযাপনে কেউ কেউ আগ্রহ দেখালে প্রধানমন্ত্রী তাতে নিরুৎসাহিত করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের মাসব্যাপী নেয়া কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নিজের উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার কথা তুলে ধরেন। জবাবে শেখ হাসিনা তাদের বলেন, চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। আমি এমন মিলাদ মাহফিল চাই না। যুবলীগ সম্পর্কে আমার কাছে অনেক অভিযোগ আছে। ঢাকা সিটির একজন নেতা ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছে। আরেকজন (সাংগঠনিক সম্পাদক) দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে। অস্ত্র উঁচিয়ে এরা কীভাবে ঘুরে। আমার স্পষ্ট কথা, এসব বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন তো কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল তখন তো কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। তাহলে এখন আবার কিসের অস্ত্রের মহড়া! একপর্যায়ে আক্ষেপের সুরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দল টানা তিন বার ক্ষমতায়। অনেকে অনেক কিছুই করেছেন। অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। কিন্তু আমার দলে যারা দুর্দিনের কর্মী, তাদের অবস্থা ঠিক আগের মতোই আছে। তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হলো না। অথচ তাদের জন্য আজকের এই আওয়ামী লীগ। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলীয়প্রধান বলেন, আমার স্পষ্ট কথা- যারা অস্ত্রবাজি করেন, ক্যাডার লালন-পালন করেন, সময় থাকতেই তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে- ঠিক সেইভাবে অস্ত্রবাজদেরও দমন করা হবে। বৈঠক সূত্র আরো জানায়, শোক প্রস্তাব উত্থাপন শেষে সাংগঠনিক আলোচনার সূত্রপাত করেন শেখ হাসিনা। বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা কমিটি ও সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান তিনি। সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের স্ব স্ব বিভাগের রিপোর্ট তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে। সংগঠনকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় সম্মেলনের আগেই সব ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, ‘নেত্রী, আপনি জাতীয় সম্মেলনের তারিখ দেন, আমরা সব ব্যবস্থা করব’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা জানান। আলোচনার একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নেত্রী, আমরা সম্মেলনে গিয়ে জেলা-উপজেলা নেতাদের কথা শুনি না। নিজেরা বক্তব্য দিয়েই চলে আসি। তখন প্রধানমন্ত্রী নানককে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তোমরা শুধু বক্তব্য দিয়েই চলে আসো না, খেয়েও আসো। এখন থেকে আর সেটা করলে চলবে না। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের কথা শুনতে হবে। তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সম্প্রতি ছাত্রলীগ ইস্যুতে নানা আলোচনা হলেও আওয়ামী লীগের সভায় বিষয়টি নিয়ে কোনো নেতাই মুখ খোলেননি। ধারণা ছিল, বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হবে না। কিন্তু আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বিষয়টি তোলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর বিরুদ্ধে আমার কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলো আমি খতিয়ে দেখেছি। তাদের আর এ পদে রাখা যাবে না। ইতোমধ্যে তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের জায়গায় ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App