×

খেলা

বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাখার নেপথ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩৬ এএম

বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাখার নেপথ্যে
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ বছরের ৬ ফেব্রæয়ারি। এর কয়েকদিন পরই বিপিএল আয়োজক কমিটি ঘোষণা দেয় যে ২০১৯ সালেই মাঠে গড়াবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টেটির পরবর্তী (সপ্তম) আসর। এমনকি একপর্যায়ে টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্যরা বেশ জোর গলায় বলেন যে, বিপিএলের সপ্তম আসর মাঠে গড়াবে চলতি বছরেরই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। আর সে সময় সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৬ ডিসেম্বরের কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরাও দল গোছানো শুরু করে দেন। এরপরই শুরু হয় নানান নাটকীয়তা। উঠে আসে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা। অবশেষে সব নাকটীয়কা অবসান ঘটে গত বুধবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে। তবে তার এই ঘোষণায় নাটকীয়তার অবসান ঘটছে না বলে বরং তা নতুন মোড় নিয়েছে বলেই অভিহিত করা যায়। এ দিন এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বেশ চমকপ্রদ কিছু ঘোষণা দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো টুর্নামেন্টের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’ রাখা। এ ছাড়া নাজমুল হাসান পাপন আরো ঘোষণা দেন, বিসিবি নিজেরাই চালাবে এ আসর। সবগুলো দল পরিচালনা করা হবে বিসিবির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। আর নির্ধারিত সময়েই অর্থাৎ আগামী ৬ ডিসেম্বরেই হবে এ আসর। টুর্নামেন্টের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে ৩ অক্টোবর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিসিবি সভাপতির এমন ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়েছে নানান তর্ক-বিতর্ক। বিশেষ করে কেন ফ্র্যাঞ্চাইজি রাখা হচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। নিজেদের তত্ত্বাবধানে টুর্নামেন্টে আয়োজন, সব দলের মালিকানা নিজেদের ওপর রাখা, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যয়ভার বহন, প্রতিটি দলের কোচিং স্টাফ সরবরাহ সব কিছুই বিসিবি কেন নিজেদের অধীনে রাখার সিদ্ধান্ত নিল এসব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে এসেছে ক্রিকেটাপ্রেমীদের মনে। এসব প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যে দাবি-দাওয়া তুলেছে সেগুলো কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয়। এ ছাড়া তার মতে, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাবি-দাওয়াগুলো বিপিএলের মূল নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আবার অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি এক বছরের মধ্যে দুবার বিপিএল আয়োজনের বিরুদ্ধে বলেও জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। এবারের বিপিএল নিয়ে নাটকীয়তার শুরুটা হয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস ছেড়ে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে চুক্তিতে জড়ানোর পর। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতির মন্তব্য, খেলোয়াড় ধরে রাখার নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে। সাকিব যেভাবে দলবদল করেছে সেটা নিয়ম-বহিভর্‚ত। বিশে^র কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই এভাবে দলবদলের নজির নেই। এটা সাকিবের খুব ভালোভাবেই জানার কথা। আমি বলব নিয়ম-বহিভর্‚ত এসব কাজ অনেক হয়েছে। কিন্তু আর হতে পারে না। এবার আমরা নিয়ম করব ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আদলে। বিসিবি সভাপতি আইপিএলের আদলে বিপিএল আয়োজনের কথা বলেছেন। কিন্তু আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন আছে, তেমনি রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে পাওয়া মূল লভ্যাংশের একটি অংশ প্রদানের নিয়ম। সেদিক থেকে নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্য যথেষ্ট সাংঘর্ষিক। তিনি একদিকে আইপিএলের আদলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা বলেছেন, অপরদিকে আবার ঘোষণা দিয়েছেন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি রাখা হবে না। বিপিএলের সপ্তম আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাখার সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা নিয়ে অনেকের মনে জন্ম নিয়েছে নানান কৌত‚হল। ফ্র্যাঞ্চাইজি রাখলে সেগুলোকে লাভের একটা অংশ দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রেই ঘোর আপত্তি বিসিবি সভাপতির। তার ভাষায়, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে লাভের ভাগ দেয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা ভেবেই সবাই কাজ করুক। আমাদের প্রত্যাশা বিপিএলের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত হবে তারা দেশের খেলার উন্নয়ন ও খেলোয়াড় গড়ে তোলার কথা ভেবেই কাজ করবেন। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে মুনাফা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূলত এটাই হলো বিপিএলের সপ্তম আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাখার মূল কারণ। কিন্তু বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই মুনাফার উদ্দেশ্যে দল গড়ে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখলে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন উঠে আসে। আর তা হলো যদি মুনাফা বা আর্থিক লাভের কোনো সুযোগ না থাকে তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা বিপিএলে কেন বিনিয়োগ করবে? এদিকে এমন পরিস্থিতিতে নতুন দাবি তুলেছে বিপিএলের সবচেয়ে সফল দল ঢাকা ডায়নামাইটস। রেকর্ড তিনবারের শিরোপাজয়ীদের প্রধান নির্বাহী ওবায়েদ নিজাম গতকাল গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, আমরা বিপিএলের সপ্তম আসরে থাকব। তবে আমাদের স্পন্সরের দায়িত্ব কিংবা দল পরিচলনার সুযোগ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিসিবি যে শর্তই দিক না কেন, আমরা তা মেনে নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App