×

জাতীয়

বিএনপির ভুলের সুযোগ নিয়েছে অন্যপক্ষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০৬ এএম

বিএনপির ভুলের সুযোগ নিয়েছে অন্যপক্ষ
বিএনপির হাইকমান্ডের এখতিয়ারবহিভর্‚ত ক্ষমতার চর্চা ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত হয়েছে। এ নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা একটি উপলক্ষ মাত্র। সিন্ডিকেটের কারণেই সরকার সমর্থিত একটি পক্ষের সহযোগিতায় কাউন্সিলের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বিএনপির নেই। কিন্তু ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তি থেকে শুরু করে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ, প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণসহ সব বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৩ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণসহ ৪৫ দিনের মধ্যে সংগঠনটির কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠনের ঘোষণাও আসে। এর পরই নতুন কমিটি গঠনের জন্য ঘোষিত তফসিল বাতিল ও বয়সসীমা তুলে দিয়ে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। আন্দোলন চলা অবস্থায়ই ২৩ জুন কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরপর নানা জটিলতার ধারাবাহিকতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত কমিটির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের মামলায় স্থগিত হয় ছাত্রদলের কাউন্সিল। এর পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ ১০ বিবাদীকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে হস্তক্ষেপের কারণ জানাতে ১০ দিন সময় দিয়েছেন আদালত। সূত্র জানায়, কারণ দর্শানোর নোটিস নিয়ে বিব্রত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে নিজেদের অস্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। ছাত্রদলের কাউন্সিলের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হয়েছিল বলে তারা সরাসরি মুখ খুলতে পারছেন না। আইনগতভাবেই নোটিসের জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে। এ ঘটনা নজিরবিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরই আমাদের প্রতিপক্ষ-পক্ষ করা হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে যথাসময়ে জবাব দেব। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা কাউন্সিল করা থেকে বিরত রয়েছি। আইনগত জটিলতার সমাধান করেই কাউন্সিল হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের বিষয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হয়নি। অন্য একটি সূত্র জানায়, ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ করতে আমানের মামলার নেপথ্যে বিএনপির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে গত ২৩ জুন ছাত্রদলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠে। নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে তারা নানা কৌশল করতে থাকে। এর মধ্যে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আজিজুল বারী হেলাল গ্রুপ সবচেয়ে সক্রিয় ছিল। অন্যদিকে, বিদ্রোহী হিসেবে কাজ করে ইলিয়াস আলী গ্রুপ। টুকু সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ছিলেন রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আর ইলিয়াস আলী গ্রুপের প্রার্থী আল মেহেদী তালুকদার। প্রথম থেকেই তারা নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে নানা কৌশলে মাঠে নামেন। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষিত অনেক নেতা থাকার পরও বিতর্কিত শ্রাবণকে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী করায় টুকুকে নিয়ে প্রথম থেকেই দলের মধ্যে রহস্য সৃষ্টি হয়। শ্রাবণের মতো আওয়ামী পরিবারের সন্তানকে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আনার চেষ্টার নেপথ্যে সরকারের বিশেষ সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে টুকু কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, প্রথমে শ্রাবণকে তারেক রহমানের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করেন টুকু। এরপর আওয়ামী পরিবারের হয়েও সে ছাত্রদলের নিবেদিত প্রাণ এমন প্রচার করে শ্রাবণের পরিবারের বিষয়টি সবার সামনে আনেন। এমনকি তারেক রহমানকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আওয়ামী পরিবারের একটা ছেলেকে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আনলে সেটা বিএনপির নৈতিক জয় হবে। তবে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন এবং বিষয়গুলো তারেক রহমানের কান পর্যন্ত পৌঁছালে এটা নিয়ে দলের ভেতর সমালোচনা শুরু। অনেকের সন্দেহ, বিলুপ্ত কমিটির ধর্ম সম্পাদক আমানের মামলার পেছনে তার সায় আছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ কোনো নেতা বা কোনো গ্রুপ কাউন্সিল পণ্ড করতে আমানকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ছাত্রদলের নেতারা দলের বিরুদ্ধ যাবে না। হয়তো আমানকে বাধ্য করেছে সরকারের লোকজন। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলের ব্যাপারে আদালত কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কারণ বিষয়টি রাজনৈতিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App