এখনো অপেক্ষায় ছাত্রদলের কাউন্সিলররা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৩ পিএম
উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলেও এখানো আশায় রয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভোট দিতে আসা কাউন্সিলরা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন। তাদের জানানো হয়েছে, জটিলতা কাটাতে তৎপর রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনা অনুযায়ী জটিলতা কাটিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত রাজিব-আকরাম কমিটির সহ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের দায়ের করা মামলায় স্থগিত হয়ে যায় কাউন্সিল। আমানের অভিযোগের ওপর ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালত। শুধু তাই নয়, ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করার পাশাপাশি আদালত থেকে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার প্রশ্নে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ ১০ বিবাদীকে ১০ দিনের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির পর কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় বেকাদায় রয়েছেন সিনিয়র নেতারা। সংকট উত্তারণে আইনজীবীদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। এমনকি ঢাকা মহানগরের ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটির করার চিন্তাও করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইনিভাবে নোটিশের দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার উঠে গেলে নতুন করে সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সিল উপলক্ষে সারাদেশ থেকে জেলা ও বিভাগের ছাত্রদলের নেতারা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু সব আয়োজন শেষে কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা দেখা গেলে এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতারা জানান, দলের পক্ষ থেকে তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাই তারা দলীয় কার্যালয়ে ও দলের বিভিন্ন বড় ভাইদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ভোরের কাগজকে বলেন, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কাউন্সিল করা থেকে বিরত রয়েছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে আদালতে যাবো। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিষয়টি ফয়সালা হলে কাউন্সিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এ ব্যাপারে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিল হাসান বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে যখন আমাদের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সফলতার দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিলো ঠিক তখনি কুচক্রীমহল এই কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করেছে। এতে কিছুটা হলেও আমাদের কাউন্সিলর উৎসব ম্লান হয়েছে। তবে আমরা মনোবল হারাইনি। কাউন্সিলকে সফল করার জন্য তারেক রহমান আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করে যাবো।
সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, আামরা তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবেই কাজ করবো। এখন পর্যন্ত তার কোনও নির্দেশনা পাইনি। অপেক্ষায় আছি। আশা করছি শিগগিরই এই সংকটের সমাধান আসবে।
রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রোজাউল করীম টুটুল বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এতোদূর থেকে রাজধানীতে এসেছিলাম ভোট দিতে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের আশ্বস্ত করছিলেন, কাউন্সিলে আমাদের ভাটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দেবেন। সারাদেশে কাউন্সিল নিয়ে উৎসাহ ছিলো। কিন্ত হঠাৎ করে সরকার ষড়যন্ত্র করে কাউন্সিল বন্ধ করে দিলো। এভাবে আমাদরে রুখতে পারবে না। সিনিয়র নেতারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তারা বসে পরবতী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা এখানো আশাবাদী সব সংকট কাটিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, অনেক আশা করে ভোট দিতে এসেছিলাম কিন্তু সরকারের ষড়যন্ত্রে কাউন্সিল স্থগিত হলো। তবে আমরা অপক্ষা করছি, অপেক্ষা করবো। প্রাথীরা সার্বক্ষণিক সুবিধা অসুবিধার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কাউন্সিল ভণ্ডুল করতে সরকারের যে প্রত্যাশা তা পূরণ হবে না।
চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি বলেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরে এভাবে কাউন্সিল স্থগিত হওয়ার বিষয়টা হতাশার হলেও আমার আশাবাদী। এটা যে সরকারের পূর্ব-পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র তা সবাই বুঝে গেছে। একটা কোর্টের অর্ডার এতো অল্প সময়ে হয় না। তারা সব ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিলো। তবে আমাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার সাধ্য সরকারের নেই।
এই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালত একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ১০ জন নেতাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট ২০০৭ সালে একটি রিট পিটিশন মামলা নিষ্পত্তির সময় বলেছিলেন, রাজনৈতিক বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। নোটিশের বিষয়ে যথাসময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার কাউন্সিল আটকে রাখতে পারবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, কাউন্সিলের ওপর যেহেতু আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে সেহেতু আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা কাউন্সিল করা থেকে বিরত রয়েছি। আইনী ও রাজনৈতিকভাবে আমরা সংকট মোকাবেলা করবো। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ৫৩৩ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন।