×

জাতীয়

পুঁথিনিলয়ের ‘বঙ্গবন্ধুও মুক্তিযুদ্ধ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৬ এএম

পুঁথিনিলয়ের ‘বঙ্গবন্ধুও মুক্তিযুদ্ধ’
হাজার স্কয়ার ফিটের ঘরের মাঝখানে পানিপূর্ণ একটি পাত্র রাখা হয়েছে। সেখানে ভাসছে নানা রংয়ের ফুলের পাঁপড়ি। পাত্রের চারপাশে বৃত্তাকারে সাজানো হয়েছে ২১টি প্রদীপ। প্রদীপের পাশে সরল রেখা বরাবর গাঁদাফুলের পাঁপড়ি দিয়ে আলপনা আঁকা। গোধূলিতে সেই ২১টি প্রদীপ জ¦লে উঠেছে। দেয়ালে প্রদীপের আলো গিয়ে পড়ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির ওপর। প্রদীপের রাঙ্গা আলোয় সেই ছবি জীবন্ত হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে রাঙা আলোয় আলোকিত হয়েছে ওই ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে থাকা প্রায় দেড়শ ছবি দিয়ে সাজানো পুঁথিনিলয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা পুঁথিনিলয় গত ২ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’ চালু করেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এই অপরূপ শিল্পকর্মটি দেখতে গিয়ে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন হয়ে সেক্টর কমান্ডার সবার ছবি রয়েছে এই কর্নারে। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারের ছবি, শিল্পী-সাহিত্যিকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশেকে সমর্থন দেয়া বিদেশি বন্ধুদের ছবি। শিগগিরই যুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটিও। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার খোলা থাকছে। কর্নারের পুরোটা ঘুরে দেখা গেছে, এ এক সুন্দরের সমাহার। বিশেষ করে বেসরকারি কোনো প্রকাশনা সংস্থা এই প্রথম নিজের টাকা খরচ করে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কর্নার করে গভীর ভালোবাসার নিদর্শন প্রকাশ করেছে। রাজধানীর সদরঘাটের পাশে গ্রেটওয়াল শপিং সেন্টারের ১৪ তলার পুরোটাজুড়েই পুঁথিনিলয়। এখানে পুঁথিনিলয়ের কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তন। একপাশে এক চিলতে বারান্দা। বারান্দায় দাঁড়াতেই বুড়িগঙ্গার ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজের ভেঁপুর শব্দ শোনা গেল। সেই ভেঁপুর শব্দের মধ্যেই পুঁথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করছিলেন। তার মতে, বহু জায়গায় বঙ্গবন্ধু কর্নার হয়েছে। কোথাও চালুর কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু পুঁথিনিলয়ের বঙ্গবন্ধু কর্নার কোনোদিন বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, একসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি বইয়ের চেয়েও বেশি কথা বলবে। অনেকে বই পড়েও বহু বিষয় মনে রাখতে পারেন না। কিন্তু ছবি দেখে অনেকের স্মৃতিই তরতাজা হয়ে উঠবে। ছবি দেখে সহজেই জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধে কার কি অবদান। আর নতুন প্রজন্মকে সেই অবদান জানানোর জন্যই এই শিল্পকর্মটি তিনি করেছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’-এর উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। এ সময় তিনি বলেন, পুঁথিনিলয়-এর স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল দুর্লভ এ চিত্রগুলোর মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো ইতিহাসকে একনজরে চোখের সামনে তুলে ধরে যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের সব ছবির পটভ‚মি জানলে বাংলাদেশের পরিপূর্ণ ইতিহাস জানা যায়। স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতির পিতার স্মৃতিকে জনগণের হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও তার দুর্লভ ছবিগুলোর মাধ্যমে তিনি জনগণের মাঝে জীবন্ত হয়ে থাকবেন চিরকাল। ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’-এ স্থান পাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ আলোকচিত্রগুলো দেখে নতুন প্রজন্ম জাতির পিতা ও এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। কর্নার ঘুরে দেখা গেছে, প্রথমেই ভাষা আন্দোলনের ছবি, তারপরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানীর ছবি রয়েছে। এরপরেই সেক্টর কমান্ডারদের ছবি। তবে এই সারিতে জিয়াউর রহমানের ছবি স্থান পায়নি। তারপরে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র ও যুবক বয়সের ছবি রয়েছে। প্রভাতফেরিতে বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। পল্লীকবি জসীমউদদীনের কাঁধে হাত রেখে বসে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবিও এখানে স্থান পেয়েছে। এরপরেই বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারের ছবি। সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র ছবিও রয়েছে। রয়েছে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের ছবি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশত্যাগী শরণার্থীদের ছবিও রাখা হয়েছে এই কর্নারে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে পুরো কর্নার ঘুরে বাইরে এসেও বুড়িগঙ্গায় চলাচলরত জাহাজের ভেঁপুর শব্দ শোনা গেল। এই শব্দের মধ্যেই পুঁথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী বললেন, ছোট্ট পরিসরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমার পুঁথিনিলয়ে ছবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কথা বলবেন। এই ছবিই আমাদের সঙ্গে ইতিহাসের সম্মিলন ঘটাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App