×

জাতীয়

নওগাঁর নৃত্যশিল্পীর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৮ পিএম

নওগাঁর নৃত্যশিল্পীর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা চেনা বৃত্তের বাইরে থাকতে ভালোবাসেন। জীবনে সার্থকতা খোঁজার চাইতে, জীবনকে উপভোগ করতে চান তারা। উল্টো করে বললে বলতে হয়, জীবনকে ভালোবাসা, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে উপভোগ করার মাঝেই যে জীবনের সার্থকতা তা উপলব্ধি করেন নওগাঁর নৃত্যশিল্পী মোরশেদা বেগম শিল্পী। সুদূর মফস্বল শহরে বসে জীবনভর নৃত্য চর্চা করে অসামান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলেন এই শিল্পী। ঢাকার স্বনামধন্য অনেক নৃত্য সংগঠনকে পেছনে ফেলে অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক নৃত্য কাউন্সিলের সদস্য পদ। একই সঙ্গে তার নৃত্য সংগঠন নৃত্য নিকেতন, নওগাঁও পেয়েছে এই স্বীকৃতি। আমাদের সবকিছুই যেন রাজধানীমুখী হয়ে গেছে। ব্যবসা করতে হলে ঢাকায় আসো, চাকরি খুঁজতে আসো ঢাকায়। ভালো অভিনেতা হয়ে নাম করতে চাও, যাও ঢাকা। কিংবা গানের শিল্পী হতে হলে, ঢাকায় না এলে কেউ তোমাকে চিনবে না। সব সুযোগ সব কিছু পিছলে বেরিয়ে যাবে হাত গলে। দূর মফস্বলে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকবে না। সারাদেশের মানুষের মানসিকতাটা এমনই। যারা মফস্বলে বেড়ে উঠে, তাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য থাকে, ঢাকা যাবো, যোগ্যতা আরো একটু বেশি থাকলে বিদেশে। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান তারা যে কোন গণ্ডিতেই জীবনকে পূর্ণতা দিতে পারেন। তাতো নিজের জীবন দিয়েই দেখিয়ে দিলেন নৃত্যশিল্পী মোরশেদা। তা না হলে নওগাঁ ডিসি অফিসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করে গত দুই দশক ধরে কিভাবে গড়ে তুললেন আন্তর্জাতিক মানের একটি নাচের দল! সেই নাচের দল নওগাঁর গন্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশের নানা প্রান্তে নৃত্য পরিবেশন করে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। নওগাঁ শহরে যে কটি নাচের দল গড়ে উঠেছে তার প্রায় সব সদস্যই তার হাত দিয়েই গড়া। যার প্রতিভার বিভা পৌঁছে গেছে ইউনেস্কোতে অথচ দেশের যেসব শিল্পী দলের প্রতিনিধি বিদেশে যায় সেখানে এঁরা অবাঞ্চিত। তাদের চেনে না এই রাজধানীর অভিজাত মহলের শিল্পীরা। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এলো যেভাবে নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য নিকেতনের সভাপতি মোরশেদা বেগম শিল্পী জানালেন, আগস্ট মাসের ৭ তারিখে প্রথম ইউনেস্কোর সদর দপ্তর থেকে যোগাযোগ করা হয়। আমরা কোন রকম যোগাযোগ করিনি কিংবা কোন ধরনের আবেদনের বিষয় ছিল না। তারা প্রথমে আমাদের ফেসবুকে পেইজে যোগাযোগ করে। ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের অ্যালকিস রাফটিস সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, আমাদেও যদি বিদেশে নাচ পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলে আমার যাবো কি না? আমরা যেতে রাজি হলে তিনি আমাদের সংগঠনের এবং আমার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। সেসব পাঠানোর পর তারা ফোনে যোগাযোগ করেন। এরপর আমাকে জানানো হয়, আমাদের কাজের পরিধি জেনে তারা খুশি। এরপর ৩০ আগস্ট ২০১৯ সন্ধ্যা ৭টায় তারা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, আমি মোরশেদা বেগম শিল্পী এবং আমার সংগঠন নৃত্য নিকেতন, নওগাঁ’কে এই আন্তর্জাতিক ডান্স কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। আমি এবং আমার দল আলাদা সদস্য পদ লাভ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যখন নিজের আর আমার দলের নাম দেখলাম তখন কী যে আনন্দ পেলাম। এত আনন্দ মনে হয় জীবনে পাইনি। একই সময়ে বাংলাদেশের আরও দুজন এ সদস্য পদ লাভ করেছে তারা হলেন ঢাকার তুরঙ্গমী স্কুল অফ ডান্স এর পূজা সেনগুপ্তা ও ধানমন্ডির বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা সোনালিকা সরকার। মোরশেদা বেগম শিল্পীর এ স্বীকৃতি প্রাপ্তি প্রসঙ্গে নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আবৃডত্ত পরিষদ, নওগাঁর সাধারন সম্পাদক রফিকুদ্দৌলা রাব্বী ইত্তেফাককে জানান, নৃত্য নিকেতনের বিশেষত্ব হচ্ছে সংগঠনটি শুধু নৃত্যের মাধ্যমে সৌন্দর্য পরিবেশনে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষকে নানা বিষয়ে সচেতন হতে উদ্যোগী হয়েছে।   শিল্পী ও তার নৃত্য নিকেতন ১৯৯৭ সালে গড়ে তুলি নৃত্য নিকেতন। প্রথমে ছিল নাচ শেখানোর বিদ্যালয়। পরে শিক্ষার্থীদের বাছাই করে গড়ে তোলা হয় নাচের দল। এরই ফাঁকে ফাঁকে আমি নিজেও প্রস্ততি নিতে থাকি। প্রশিক্ষণ নিয়েছি দেশের সেরা নৃত্যশিল্পীদের কাছ থেকে। কখনোই ঢাকামুখী সংগঠন গড়তে চাইনি। নওগাঁ শহরকে নিজের ঘাঁটি রেখে সারাদেশে নৃত্য প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আমরা যখন স্টেজে নৃত্য পরিবেশন করি সবাই খুব অবাক হয়। মফস্বলের দল হিসেবে সবাই প্রথমে কিছুটা অবহেলার দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু আমি ও আমার দলের ছেলেমেয়েরা তাদের পরিবেশনা দিয়ে মানুষের সম্মান জিতে এনেছি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্মানও অর্জন করলাম। আমরা এই মফস্বল শহরে ব্যয়বহুল চিত্রাঙ্গদা এবং শ্যামা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App