×

জাতীয়

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা : রায় বাস্তবায়নে নেই পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬ এএম

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে বহু যুগান্তকারী রায় দেয়া হলেও আদৌ তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা অথবা কতটুকু হচ্ছে- এগুলো তদারকিতে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেই। ফলে বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসব রায়ের শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়গুলো বাস্তবায়নে মনিটরিং সেল গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্টের দেয়া তথ্য মতে- দুধে ভেজাল, পানিতে দূষণ, পরিবেশ দূষণ, গ্যাসের দামবৃদ্ধি, নদী দখল ও দূষণ রোধ, খাদ্যপণ্যে ফরমালিন ঠেকানো এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে জনস্বার্থে একের পর এক মামলা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে মানুষের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার রক্ষায় এ ধরনের মামলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা কখনো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আবার কখনো কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট (পিআইএল) করেন। উচ্চ আদালত এসব মামলা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে প্রতিকার দিতে এগিয়ে আসছেন। কখনো কখনো স্বতঃপ্রণোদিত আদেশও দেন। ঢাকার চারপাশের নদীর রক্ষণাবেক্ষণ, মহাস্থানগড় সংরক্ষণ, শহীদ মিনারের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের কাছ থেকে ভ্যাট ও ইউজার ফি আদায় বন্ধ, পেপার স্প্রে নিষিদ্ধসহ জনগুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় কৃষি জমি দখল ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ এবং শিল্প কারখানার পরিবেশ দূষণ ও কৃষি জমি দখলের কারণে এ পর্যন্ত ওই এলাকায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টদের আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের কবরটি ঠিক রেখে সেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ভেঙে ফেলতে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুলশান লেকের পাশে বিটিসিএলের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ বস্তিও উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। খাদ্য ও পোশাকে বিষাক্ত ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ঠেকাতে মাছ, মিষ্টির দোকান এবং পোশাক কারখানাগুলো তদারকিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ ফরমালিন ও রাসায়নিকযুক্ত খাদ্যদ্রব্য আমদানি নিষিদ্ধের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের কাছ থেকে ইউজার ফি হিসেবে অর্থ আদায় অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে পিআইএলের সংখ্যার আলাদা কোনো হিসাব নেই। তবে পর্যায়ক্রমে দিন যত গড়িয়েছে, ততই এ ধরনের মামলা বেড়েছে। এখন এ ধরনের মামলার কারণে অনেক সময় বিচারপতিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তারপরও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে প্রতিকার দেয়ায় বিচারপ্রার্থীরা খুশি। হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লুাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু সংগঠন এ ধরনের মামলা করছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী ব্যক্তিগতভাবেও এ ধরনের মামলা করে থাকেন। জনস্বার্থে দায়ের করা মামলার রায় বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ভোরের কাগজকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই ধরনের মামলা হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের মামলা আমাদের জন্য একটি নতুন বিষয়। এই ধরনের মামলার রায় সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলেও কিছুটা বাস্তবায়ন হচ্ছে। আস্তে আস্তে বাস্তবায়নের হার আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ বলেন, জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য কোনো মনিটরিং সেল নেই। অন্যদিকে আদালতের রায় ও আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ ছাড়া নির্বাহী বিভাগে প্রশাসনিক সংস্কার না হওয়ায় ব্যক্তিস্বার্থে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়। এ জাতীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার রায় যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় না। তিনি আরো বলেন, রায় বাস্তবায়ন না হলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা যায়। এ ছাড়া যে কেউ আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করতে পারেন। কারণ সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিলে সেটা ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ হয়ে যায়। মনজিল মোরসেদ মনে করেন, কর্তৃপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি না হলে এবং প্রশাসনকে জনস্বার্থ মামলার নির্দেশনা কঠোরভাবে পালনে উদ্বুদ্ধ করা না গেলে কোনো চেষ্টাই সফলতার মুখ দেখবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App