×

অন্যান্য

কেজি দরে রেলওয়ের নষ্ট ওয়াগন-ক্যারেজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৮ এএম

কেজি দরে রেলওয়ের নষ্ট ওয়াগন-ক্যারেজ
কেজি দরে রেলওয়ের নষ্ট ওয়াগন-ক্যারেজ
বাংলাদেশে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন ও সাইটে মালবাহী ওয়াগন, যাত্রীবাহী ক্যারেজ, তেলবাহী ট্যাংক ও পরিত্যক্ত রেল পার্টি অবহেলায় রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এতে যেমন রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে তেমনি পড়ে থাকা এসব ওয়াগান বগির ভেতরে চলছে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যক্রম। সারা দেশে এ ধরনের পড়ে থাকা ওয়াগান, ট্যাংক ও ক্যারেজের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। সেই সঙ্গে রয়েছে শত শত কিলোমিটার পরিত্যক্ত রেল পার্টি। এসব পরিত্যক্ত রেলের জিনিসপত্র টেন্ডারের মাধ্যমে কেজি দরে বিক্রি করছে রেলওয়ে। আবার আইনি জটিলতায় স্ক্রাব বিক্রিতেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত দুবছরে এসবের স্ক্রাব বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯০ লাখ টাকা। অথচ প্রায় হাজার কোটি টাকার মালামাল রোদে জলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, চুরি হচ্ছে। আর লোকসানের বোঝা বাড়ছে রেলওয়ের। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ও রেল ট্যাংক খালি না পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন ধরে ভাটা পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। ২০ বছর আগে যেখানে শতাধিক মালবাহী ওয়াগান এবং অর্ধশতাধিক তেলবাহী গাড়ি চলত, বর্তমানে তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ২০-২৫টিতে। আর মালামাল পরিবহনের এ ঘাটতি হিসাবে ইঞ্জিনের স্বল্পতাকে দায়ি করছেন রেলের কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে ডাবল লাইন না হওয়ায় প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন দিনে দিনে কমছে। ফলে আয়ও কমেছে রেলওয়ের। আবার ব্যবহার না হওয়ায় রেলওয়ের প্রায় অধিকাংশ ওয়াগান দেশের বিভিন্ন স্টেশন ও ওয়ার্কশপে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ দেড় হাজারের মতো ওয়াগান ও তেলের ট্যাংক কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছে রেলওয়ে। এ বিষয়ে গতকাল রেলের এডিজি (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, রেলের মালবাহী মোট ১,৬৬১টি ক্যারেজের মধ্যে ৫৭০টিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মালবাহী ৩৪৮৬টি ওয়াগানের মধ্যে ১,২৩৩টি পরিত্যক্ত রয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনা, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি, চলাচল না করাসহ পরিচর্যার অভাবে অনেক ওয়াগান ও মালবাহী ক্যারেজ নষ্ট হয়ে গেছে ও যাচ্ছে। আবার যাত্রীবাহী ট্রেন বাড়ানোয় মাল পরিবহনের জন্য ইঞ্জিন নেই। [caption id="attachment_163072" align="alignleft" width="300"] পরিত্যক্ত নষ্ট ওয়াগন[/caption] তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ইঞ্জিনের স্বল্পতা রয়েছে। এসব কারণে অধিকাংশ ওয়াগান অব্যবহৃত হয়ে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তিনি জানান, অনেক সময় ভারত থেকে মালামাল আনতে ভারতীয় ওয়াগানের ভাড়াও গুনতে হচ্ছে রেলের। তিনি আরো জানান, এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়াগান বিক্রির জন্য টেন্ডার করছি। বিগত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এসব ওয়াগান ও রেলের ভাঙাচোরা জিনিস বিক্রি করে ৬৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে স্ক্রাপ বিক্রি বাবদ রেলের আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বন্ধ হওয়া রেললাইনের রেল পার্টিও টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ইঞ্জিনের অভাবে পণ্য পরিবহন করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া রেলবহরে যত ওয়াগান রয়েছে তার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। তা ছাড়া ব্যবহার না হওয়ায় অনেক মালবাহী ও তেলবাহী ওয়াগান-ট্যাংক পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা যতটা পারি ওয়ার্কশপে মেরামতের চেষ্টা করছি। আর ভারত থেকে আগামীতে ১ হাজার মালবাহী ওয়াগান আনার চুক্তি হয়েছে। রেলের পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলওয়ের পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ভর করতে হয় ইঞ্জিনপ্রাপ্তির ওপর। এতে বন্দর থেকে খালাস হওয়া পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পাঠাতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পণ্য পরিবহনে যেসব ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার বেশির ভাগেরই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে ৪৬ বছর আগে। ১৯৫৩ সালে আমদানিকৃত রেলের ইঞ্জিনগুলো অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পার করেছে ১৯৭৩ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ইঞ্জিন দিয়ে রেল পরিচালনার ফলে পণ্য পরিবহনে কমে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে স্বাভাবিকভাবে পণ্যবাহী একটি ট্রেনের সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। পথে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় কখনো কখনো দুই থেকে তিন দিনও লেগে যাচ্ছে। আবার ইঞ্জিন বিশ্রাম না নিয়ে ফিরে আসার ফলে যাত্রাপথে প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে পণ্য পথে পড়ে থাকে। সে কারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য রেলওয়েতে দিতেও গররাজি হচ্ছেন। যার ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। সূত্র জানায়, রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন বা ইয়ার্ডে প্রায় ৩-৪ হাজার, পশ্চিমাঞ্চলে ১-২ হাজার ওয়াগান, ক্যারেজ ও ট্যাংক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যার ফলে কোটি কোটি লোকসান হচ্ছে রেলওয়ের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App