দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৮ বছর আগে। অথচ এত দিনেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তজুড়ে রয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের ছাপ। পাক (পাকিস্তান) লেখা প্রতিটি পিলার যেন নীরবে সাক্ষী দিচ্ছিল পাকিস্তানিরা শোষণ ও শাসন করে গেছে আমাদের। অবশেষে বাংলাদেশের সীমানা পিলার থেকে মুছে ফেলা হয়েছে এ দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত নামটি। প্রতিটি সীমান্ত পিলারের ‘পাকিস্তান’ অংশটি মুছে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ’। এখন থেকে সব সীমানা পিলারে থাকবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত পিলার থেকে পাক লেখার বদলে বিডি (বাংলাদেশ) লেখার কাজ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিজিবি সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীন হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর ইংরেজিতে খোদাই করে ইন্দো-পাক (ইন্ডিয়া-পাকিস্তান) লেখা আট হাজারের বেশি পিলার স্থাপন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সীমান্তের অনেক সীমানা পিলারেই ‘পাক’ লেখা ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। বিজয়ের এত বছর পরও সীমান্ত পিলারগুলোয় ‘পাক’ শব্দটি ছিল। সেগুলো মুছে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের নাম না লেখার বিষয়টি সীমান্তের মানুষ এবং যারা বিষয়টি জানেন, তাদের কাছে ছিল বিড়ম্বনার। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম অধীনস্থ রিজিয়নগুলোয় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। এরপরই বিজিবির সদস্যরা সীমান্ত পিলারের পাক লেখা পরিবর্তন করে বিডি লেখার কাজ শুরু করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বিজিবির সদস্যরা ইতোমধ্যেই সীমান্ত পিলারগুলো থেকে ‘পাক’ লেখা মুছে ফেলে সেখানে ‘বিডি’ লেখার কাজটি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। পাকিস্তানের স্থলে বাংলাদেশ লেখা প্রতিস্থাপনের ফলে বিজিবিসহ সীমান্তবর্তী মানুষের মনোবল আরও অনেক গুণ বেড়ে গেছে। বিজিবিকে অত্যন্ত দ্রুত ও নিখুঁতভাবে কাজটি করতে দেখে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষসহ দেশের সাধারণ জনগণ বিজিবিকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সীমান্ত পিলারের নাম পরিবর্তন সেই ভূমিকারই আরো একটি অনন্য ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিজিবিকে সীমান্ত পিলারের নাম পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিজিবির সব সদস্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।