×

জাতীয়

হলে সিট রেখে ফ্ল্যাটে থাকেন শোভন-রাব্বানী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:১১ পিএম

হলে সিট রেখে ফ্ল্যাটে থাকেন শোভন-রাব্বানী

ফাইল ছবি

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো কমতি নেই। কমিটি গঠনের পর থেকে সাংগঠনিক কাজের চেয়ে ‘অকাজে’ সময় ব্যয় করেছেন বেশি বলেও অভিযোগ রয়েছে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ছুটেছেন টাকার পিছনে। যেখানে টেন্ডার সেখানেই নজর পড়েছে তাদের। সাংগঠনিক কমিটি গঠনের নামে চলে তাদের বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা।

এছাড়া গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে অনেক জেলা-উপজেলায় বিবাহিত, অছাত্র, মাদকাসক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে কমিটি করেছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ‘ম্যানেজ হয়ে’ বহাল রেখেছেন অনেক উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটি। অপকর্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তারা দু’জনই হল ছেড়ে উঠেছেন অভিজাত ফ্ল্যাটে।

এদিকে অপকর্মের বহুবিধ অভিযোগে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোভন-রাব্বানীর কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা উষ্মা প্রকাশ করায় এবং গণভবনে প্রবেশের পাস বাতিল করায় দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নেমেছে বলেও জানা গেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শোভন-রাব্বানী ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে সেখানেই ঠিকাদারের উপর ‘খড়গ’ নেমে এসেছে। বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটে কমিটি গঠনে নয়-ছয়, নেতাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্ক্ষলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে শোকজ করে পরে ম্যানেজ হয়েছেন। ঢাকার পাশে সাভারে একাধিক মিল-কারখানায় রাব্বানীর যোগাযোগের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

সূত্রমতে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ইবি, শাবি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের নাম। তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে মাদক সেবন ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগও।

ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের ৩১৬ নম্বর রুমে থাকলেও পরে হল ছেড়ে উঠেছেন গ্রীন রোডের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে। অথচ হলের ওই রুমটি এখনো তার নামে বরাদ্দ রয়েছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০৮ ও ২০৯ নম্বর রুমে পর্যায়ক্রমে থাকলেও পরে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে রুম বরাদ্দ নেয়। কিন্তু সেখানে না উঠে তিনি পরিবাগের মোতালেব প্লাজার (১১ তলার) একটি ফ্ল্যাটে উঠেন। সেখানে সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। যাতে আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি সৃষ্টি হলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না। যাতায়াত করেন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা। আবার ‘শিক্ষার্থী দুই ছাত্রনেতার’ ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকার উৎস নিয়েও খোঁদ দলের ভেতরে প্রশ্ন রয়েছে।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এক কোটি টাকা, জাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা ৫০ লাখ, সাধারণ সম্পাদক এসএম সুফিয়ান চঞ্চল ২৫ লাখ টাকা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২৫ লাখ টাকা করে ভাগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রাজীব আহমেদ রাসেলের নামও জড়িয়ে পড়েছে এই কেলেঙ্কারীতে। মূলত জাবি কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে ‘টাকা ভাগাভাগিতে বৈষম্য’ ফাঁস হয়েছে চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

এদিকে, সমালোচনা ঝড় উঠায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা শোভন-রাব্বানীকে পাস কাটিয়ে চলছেন। ছাত্রলীগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎ করেও নিরাশ হয়েছেন তারা। পাশাপাশি বেগতিক পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব রয়েছেন শোভন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়। এরপর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App