প্রশ্নে একাধিক শুদ্ধ উল্টর হতাশায় দুলাখ পরীক্ষার্থী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৭ এএম
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)
সরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যবস্থা নেয়া হবে -ড. মোহাম্মদ সাদিক, চেয়ারম্যান পিএসসিপাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অধীনে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ইংরেজি অংশের দুটো প্রশ্নের ব্যাপারে সুষ্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, প্রশ্ন দুটির মধ্যে একাধিক শুদ্ধ উত্তর থাকায় ভুল ও বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা হতাশ। পিএসসির ভুলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় নম্বর কাটা গেলে তাদের ‘সর্বনাশ’ হয়ে যাবে। কারণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এক নম্বরের জন্যও বহু পরীক্ষার্থী অসফল হয়ে যান। পরীক্ষার্থীদের মতে, এমসিকিউর ওই দুটি প্রশ্নের চারটি বিকল্পের মধ্যে একটির বেশি শুদ্ধ উত্তর রয়েছে। অথচ চারটি বিকল্পের মধ্যে একটি শুদ্ধ উত্তর থাকার কথা। পরীক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশ্নে একাধিক শুদ্ধ উত্তর থাকায় পিএসসি কোনো উত্তরকে গ্রহণ করবে সে সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকায় বহু পরীক্ষার্থী সেগুলোর উত্তরই দেননি। আবার অনেকে একটি উত্তর দিয়েও বুঝতে পারছেন না, কোনটিকে সঠিক বলবে পিএসসি। তাদের মতে, যেহেতু প্রশ্নগুলোর উত্তর কম্পিউটারের মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে, পিএসসির সেট করা উত্তরের সঙ্গে না মিললে কম্পিউটার সেটাকে শুদ্ধ উত্তর হিসেবে নেবে না। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ভোরের কাগজকে বলেছেন, পিএসসির সংশ্লিষ্ট সদস্যই প্রশ্নপত্রের বিষয়টি ভুল না শুদ্ধ তা খতিয়ে দেখবেন। যাচাই বাছাইয়ে অভিযোগগুলো সত্যি হলে পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিএসসির মাধ্যমে কোনো পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নেয়ার জন্য পিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য কবি আব্দুল মান্নান ভোরের কাগজকে বলেছেন, এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুলগুলো এতই সূক্ষ্ম যে সহজে ধরা পড়বে না। তবুও সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের বিকল্প অংশে একাধিক শুদ্ধ উত্তর রয়েছে এবং এ থেকে কোনটি নেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি যিনি প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন তার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখা চাওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুল থাকতেই পারে। এ ক্ষেত্রে পিএসসির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তবু উত্তরপত্র মূল্যায়নের আগে প্রশ্নগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি দেখা গেলে এবং এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে সেটি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে যাবে বলে সাফ জানান তিনি। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত গত ৬ সেপ্টেম্বর হয়। এক হাজার ৩৭৫টি পদের বিপরীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৩ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশ নেন প্রার্থীরা। কিন্তু প্রশ্নের ইংরেজি অংশের ১৮৮ এবং ১৯৬ নম্বর প্রশ্নে বিভ্রান্তি থাকায় পরীক্ষার্থীরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্নপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ৩ নম্বর সেটের ইংরেজি অংশের ১৮৮ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়, What is the noun form of the word ‘waste’ ? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য চারটি বিকল্প দেয়া হয়। এগুলো হলো- a) wastess b) wasting c) wastage d) wasteful. পরীক্ষার্থী ও ইংরেজির অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা বলে এবং চেম্বার ডিকশনারি দেখে জানা গেছে, প্রশ্নে উল্লিখিত ‘waste’ শব্দটাই noun হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আবার যদি এটাকে ‘verb’ হিসেবেও ধরা হয় তাহলে এর ‘noun Form- wasting’ হতে পারে। আবার ‘wastage’ শব্দটাও ‘noun’। ফলে শুদ্ধ বিকল্প উত্তর এখানে দুটো, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিমূলক। কাজেই এখানে কোন উত্তর শুদ্ধ হবে তা পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারছেন না। একই অংশের ১৯৬ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘Swimming is a good exercise. Here ‘swimming’ রংa/an-। এর উত্তরের জন্য যে চারটি বিকল্প রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- a) verb b) noun c) gerund d) adverb। ২০১৫ সালে প্রকাশিত অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নার্স ডিকশনারি অষ্টম ও নবম সংস্করণের বরাত দিয়ে একাধিক পরীক্ষার্থী বলছেন, এই প্রশ্নের চারটি বিকল্পের মধ্যে ‘বি’ এবং ‘সি’ দুটোই সঠিক। এখানেও পিএসসি কোন উত্তরকে সঠিক বলবে তা পরীক্ষার্থীরা জানেন না। আর এখানেই পরীক্ষার্থীরা আপত্তি জানিয়েছেন, কোনো পরীক্ষার্থী যদি এই প্রশ্নের উত্তর ‘বি’ দেন তাহলে সঠিক হবে আবার কেউ যদি ‘সি’ দেন সেটাও সঠিক হবে। ইংরেজি ব্যাকরণ দুটোকেই সঠিক বলছে।