ব্যর্থতার মিছিলে তরুণ সাদমানের লড়াই
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২০ পিএম
যে কয়জন তরুণ ক্রিকেটার সাম্প্রতিক সময়ে টাইগার দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের মধ্যে সাদমান ইসলাম অন্যতম। শুধু ভক্তদের মনেই নয়, সাদমান জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন বাংলাদেশের টেস্ট দলেও। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল নেই। তাই আফগানদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ওপেনিংয়ে বাড়তি দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। কিন্তু প্রথম ইনিংসে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন তিনি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিকই দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ। আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে লিটন দাশ, মোসাদ্দেক হোসেন, মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হকের মতো দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলা ক্রিকেটাররা যখন অসহায় আত্মসমর্পণ করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দ্রুত সাজঘরে ফেরেন, তখন ব্যাট হাতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন মাত্র ১০ মাস আগেই সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া তরুণ সাদমান। গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান নিয়ে ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষ করে বাংলাদেশ দল। আর এদিন টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রানের ইনিংসটি আসে সাদমানের ব্যাট থেকে। বলা যায়, সতীর্থদের ব্যর্থতার মিছিলে যেন একাই লড়াই করেছেন চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার।
সাদমান ইসলামের টেস্ট অভিষেক হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। ওই ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল উইন্ডিজ। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসেই ব্যাট হাতে ঝলক দেখান বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে সাদমান খেলেন ৭৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সবচেয়ে বড় কথা, ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসেই চরম ধৈর্যের পরিচয় দেন তরুণ এই ওপেনার। উইন্ডিজ পেসারদের গতির মুখে ৭৬ রানের ইনিংসটি তিনি খেলেন ১৯৯ বলে।
উইন্ডিজের বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত ইনিংসটি সাদমানকে জায়গা করে দেয় নিউজিল্যান্ড সফরের দলে। আফগানদের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে সাদমান তার ক্যারিয়ারের শেষ দুটি টেস্টই খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। সেখানকার পেস সহায়ক বাউন্সি উইকেটে কিউই পেসারদের দ্রুতগতির বোলিংয়ের বিপক্ষে ক্রিজে সেট হয়েও ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারেননি তিনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত ২ ম্যাচের ওই টেস্ট সিরিজে ৪ ইনিংসে সাদমানের ব্যাট থেকে আসে ১১৭ রান। যেখানে সর্বোচ্চ ৩৭। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও নিউজিল্যান্ড সফরে প্রতিবারই এই ওপেনার আউট হয়েছেন ক্রিজে সেট হয়ে। তার ইনিংসগুলোর দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। নিউজিল্যান্ড সফরে চার ইনিংসে তার রান যথাক্রমে- ২৪, ৩৭, ২৭ ও ২৯।
অনেকটাই একই চিত্র দেখা গেল ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টেও। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে কিছু বুঝে উঠার আগেই আফগান পেসার ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের বলে উইকেটরক্ষক আফসার জাজাইয়ের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। শূন্য রানে আউট হওয়ার আগে তিনি মোকাবেলা করেন মাত্র ৪ বল। তবে গতকাল দলের বিপর্যয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে যেন চমক দেখানোর লক্ষ্য নিয়েই ব্যাটিয়ে নামেন সাদমান। সতীর্থরা যখন আফগান স্পিনারদের ঘূর্ণিতে কাবু হয়ে আসা-যাওয়ার নাটক মঞ্চস্থ করতে ব্যস্ত তখন ইনিংসের একপ্রান্ত আগলে রাখেন এই ওপেনার। দিয়েছিলেন বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৪১ রানের ইনিংস। ৩৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতা অসম্ভবই বলা যায়। সে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে চট্টগ্রাম টেস্টে জয় পাওয়ার চেয়ে ড্র করাই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। আর এ বিষয়টি বিবেচনা করলে সাদমানকে সফলই বলতে হবে। কেননা, ৪১ রান করতে তিনি খেলেছেন ১১৪ বল। অন্য ব্যাটসম্যানরাও এমন ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে পারলে হয়তোবা চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতো।
সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৪টি টেস্ট খেলেছেন সাদমান। করেছেন ৩৩.৪৩ গড়ে ২৩৪ রান। সর্বোচ্চ ৭৬।