×

জাতীয়

বামনা-বদনিখালী নদী পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

বামনা-বদনিখালী নদী পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

বরগুনার বামনা-বদনীখালীতে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী খেয়ায় নদী পার হন -ভোরের কাগজ

বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদীতে যাত্রীদের পারাপারে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খেয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলা বছর শুরুর চার মাস পর বরগুনা জেলা পরিষদ এ আদেশ দিল। এর পরও বেঁধে দেয়া নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে বামনা-বদনিখালী খোয়াঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিনই ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ইজারাদারদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। জানা গেছে, চলতি ১৪২৬ বাংলা সনের বৈশাখ মাসের শুরু থেকে বামনা খেয়া ঘাটের ইজারা পান হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। জেলা পরিষদের খেয়াঘাট ইজারা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় চলতি বছরে ভাড়া উত্তোলনের অনুমতি পান তিনি। শুরুতে ১০ টাকা করে জনপ্রতি ভাড়া উত্তোলন করা হতো। হঠাৎ দুমাস ধরে উপজেলার সব খেয়াঘাটের ভাড়া বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করা হয়। এত দিন কোনো খেয়াঘাটে জেলা পরিষদের কোনো ভাড়ার তালিকা টাঙানো না থাকলেও ভাড়া বৃদ্ধির পর প্রতিটি ঘাটে বড় করে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন বামনা-বদনিখালী খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বরগুনা জেলা পরিষদ কর্তৃক একটি সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে মানুষ জনপ্রতি ১৫ টাকা, বাইসাইকেল প্রতিটি (একজন আরোহীসহ) ১৮ টাকা, মোটরসাইকেল প্রতিটি (একজন আরোহীসহ) ৩০ টাকা, রিকশা/ভ্যান/ঠেলাগাড়ি প্রতিটি ১৫ টাকা, গরু/মহিষ এক বছরের ওপরে (প্রতিটি) ২৫ টাকা, গরু/মহিষ এক বছরের নিচে (প্রতিটি) ১৫ টাকা, ছাগল/ভেড়া ইত্যাদি প্রতিটি ৬ টাকা, মালামাল ১৫ কেজির ওপরে প্রতি কেজি ৩০ পয়সা, সিমেন্ট/সারের/চালের বস্তা (৫০ কেজি পর্যন্ত) ৬ টাকা, সিমেন্ট/সারের/চালের বস্তা (৫০ কেজির ওপরে) ৮ টাকা, আসবাবপত্র (পালংক/শোকেস, ওয়ারড্রব) ইত্যাদি প্রতিটি ২২ টাকা, ঢেউটিন প্রতি বান্ডিল ১৫ টাকা ও হাঁস-মুরগি খাঁচাভর্তি ১০ টাকা। একাধিক মোটরসাইকেলসহ পারাপার করা যাত্রীরা অভিযোগ করেন- সাইনবোর্ডে লেখা আছে মোটরসাইকেল ও একজন আরোহীসহ ৩০ টাকা। কিন্তু এখানে তাদের কাছে রাখা হচ্ছে ৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার বেতাগী উপজেলার বিষখালী তীরের বদনিখালী বন্দরে হাটের দিন। ওই দিন বদনিখালী বাজারে প্রচুর গরু বেচাকেনা চলে। ফলে এ খেয়া দিয়ে কয়েকশ গরু পারাপার হয়। প্রতিটি গরু পার হতে ২৫ টাকা জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারণ করে দিলেও এই খেয়াঘাটে পার হতে ১শ থেকে ২শ টাকা করে দিতে হয়। বামনা-বদনিখালী খেয়ায় প্রতি সপ্তাহে পারাপার করা যাত্রী মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব হাওলাদার জানান, প্রতি সপ্তাহে তাকে এই খেয়া দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে হয়। অথচ ভাড়ার তালিকায় ত্রিশ টাকা লেখা থাকলেও তারা নিচ্ছে চল্লিশ টাকা। খেয়াঘাটের চলতি বছরের ইজারাদার হাফিজুর রহমান বলেন, খেয়ায় নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবে মোটরসাইকেল ওঠানো-নামানোর জন্য মাঝিকে কেউ খুশি হয়ে ৫-১০ টাকা দিতেই পারেন। ঘাটের ট্রলার মাঝি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতি ট্রলারে প্রতিবার পার হতে যে টাকা কালেকশন হয় তার ছয় ভাগের এক ভাগ আমরা মাঝিরা পাই। তবে মোটরসাইকেল আরোহীদের কাছ থেকে যে ১০ টাকা বেশি নেয়া হয়, তা আমাদের ওই ভাগের ভেতর ধরে দেয় কিনা আমরা জানি না। শুধু বামনা-বদনিখালী খেয়াই নয়, রামনা-ফুলঝুড়ি খেয়াঘাটেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রামনা-ফুলঝুড়ি খেয়াঘাটের ট্রলারচালক আ. জলিল জানান, জেলা পরিষদের নির্ধারিত মোটরসাইকেলের ভাড়া পাঁচ টাকা বেশি নিচ্ছি। এই খেয়াঘাটে রামনার ওপারে কোনো জেটি না থাকায় অনেক কষ্ট করে মোটরসাইকেল ওঠানো-নামানো হয়। তাই আমরা পরিশ্রমিক হিসেবে এই পাঁচ টাকা বেশি নিচ্ছি। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে বছরের মাঝখানে এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে সরকার তার পাওনা রাজস্ব হারাচ্ছে। রামনা-ফুলঝুড়ি খেয়াঘাটের ইজারাদার মো. নুর বাশার জানান, প্রতি তিন বছর পর পর খেয়া ভাড়া বৃদ্ধি হয়। চলতি বাংলা বছরের শুরুতেই এই ভাড়া বৃদ্ধির কথা ছিল। অফিসিয়াল ঝামেলায় আমাদের চার মাস কম ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের পারাপার করানো হতো। এখন জেলা পরিষদ ভাড়া বাড়িয়েছে তাই আমরা যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করছি। বরগুনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন বছর পর পর খেয়াঘাটের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। কোনো খেয়াঘাটে যাত্রী বা মালামাল পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App